এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জন্মবধির ও মারাত্মক বধিরদের চিকিৎসায় আলোকবর্তিকা ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ১২ জুন, বুধবার, ২০২৪ ১৮:৪৪:৩৯
জন্মবধির ও মারাত্মক বধিরদের চিকিৎসায় আলোকবর্তিকা ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’

যুগভেরী ডেস্ক :: সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে ২০২২ সালের ১৫ মে সর্বপ্রথম অপারেশন করে আদ্রিকা রায় কথা এক শিশুর কানে স্থাপন করা হয়েছিল কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট। এরপর একে একে ৬২ জন রোগীকে অপারেশনের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে শোনার সক্ষমতা। তাদের মধ্যে অনেকেই আগে কানে একেবারেই শুনতে পেতেন না। এখন তারা সকলেই কানে শুনতে পারছেন। বুধবার (১২ জুন) দুপুরে ওসমানী মেডিকেলের নতুন ভবনের ১০ম তলায় কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রমের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান ওসমানী মেডিকেলে চলমান এ কর্মসূচি পরিচালক ডা. নূরুল হুদা নাঈম।
তিনি জানান, সারাদেশের ৫টি স্থানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে চলমান আছে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম। এই ৫টির একটি ওসমানী মেডিকেলের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম। সিলেটের মানুষ অনেক সৌভাগ্যবান এখানকার ৬ জন চিকিৎসক আন্তর্জাতিক মানের এক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে সক্ষম। তাদের হাতেই সিলেটের রোগীদের অপারেশন হচ্ছে। নানারকম সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সরকারের এ উদ্যোগটি জন্মবধির ব্যক্তিদের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দিয়েছে। লোকবল ও আনুষঙ্গিক সাপোর্ট বৃদ্ধি হলে এ সেবার পরিধি আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।

ডা. নূরুল হুদা নাঈম এক প্রেজেন্টেশনে আরো জানান, সরকারের অত্যন্ত মহৎ এই প্রকল্পটি এক স্বপ্নযাত্রার নাম। আমরা আশাবাদি ধীরে ধীরে এর পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সিলেটে যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন অবধি মোট ৬২ জন রোগীর সার্জারি করেছি। তারা সবাই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি ছিল।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়, যাদের ঘরে জন্মবধির শিশু রয়েছেন তারা সরকারের এ সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা হলেও সরকার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করে দিচ্ছে। পূর্ব নির্ধারিত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ রোগীকে বহন করা ছাড়া রোগীর তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রমে গরীব ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর বধিররা কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস পাচ্ছেন। বধির দরিদ্র রোগীদেরকে বিনামূল্যে ডিভাইস দেওয়া হচ্ছে এবং স্বচ্ছল পরিবারের রোগীদেরকে আংশিক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ইতোমধ্যে ৬২টি ডিভাইস সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩২ জন ছেলে ও ৩০ জন মেয়ে শিশু রয়েছে। আর প্রাপ্তবয়স্ক ৪ জনও রয়েছেন। আরও ৩৫টি ডিভাইস স্থাপনের আবেদন অপেক্ষমান আছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেবা গ্রহিতা রোগীদের অনেকেই উপস্থিত থেকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেন। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস সার্জারির পরবর্তি পদক্ষেপ বর্ণনা করে জানানো হয়, শব্দ বুঝতে ও কথাবলা শেখানোর জন্য ইমপ্লান্ট গ্রহীতাকে স্পিচ থেরাপি বা হেবিলিটেশন থেরাপি প্রদান করা হয়। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ল্যাব ও আলাদা অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছে। জনবল তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে এখানকার ৬ জন চিকিৎসক এখন এ সেবা প্রদানে পুরোপুরি সক্ষম। এছাড়াও ইমপ্লান্ট সার্জারির সুবিধার্থে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে প্রয়োজনীয় উচ্চ কারিগরী মানসম্পন্ন অডিওলজিক্যাল এবং সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট গ্রহণে আগ্রহী শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সরকারি সহায়তায় বিনামূল্যে-আংশিকমূল্যে সার্জারির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এ সুবিধা প্রদান করা হয়। নির্ধারিত ফরমে তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে এ সার্ভিসটি গ্রহণের আবেদন করা যাবে। ডা. অরূপ রাউতের সঞ্চালনায় সাধারণ জনগণের জ্ঞাতার্থে সংবাদ সম্মেলনে ইমপ্লান্ট কার্যক্রম বর্ণনা করেন চিকিৎসকরা। তারা বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। এটি ‘বায়োনিক ইয়ার’ নামেও অভিহিত। মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির যারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হিয়ারিং অ্যাইড ব্যবহার করে। ভালো শুনতে সক্ষম হয় না, তাদের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রয়োজন হয়। ইমপ্লান্ট অপারেশনের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের কক্লিয়াতে স্থাপন করতে হয়। ইমপ্লান্টের দু’টি অংশ। একটি অংশ কানের বাইরে এবং অপরটি ভিতরে থাকে। মারাত্মক বা সম্পূর্ণ শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি যারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হিয়ারিং অ্যাইড ব্যবহার করেও ভালো শুনতে পায় না তারা ইমপ্লান্টের মাধ্যমে শ্রবণ জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জন্মগত বধিরদের ক্ষেত্রে ৫ বছর বয়সের পূর্বে বিশেষত: ২-৩ বছর বয়সে ইমপ্লান্ট করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কথা শেখার পর যাদের শ্রবণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা সাধারণত ভাল ফলাফল পেয়ে থাকে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন কমিটির সভা শেষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।এতে উপস্থিত ছিলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্ত্তী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহিদুল ইসলাম, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী, ডিভিশনাল কন্টোলার অব অ্যাকাউন্টস মো. হাসান হাফিজুর রহমান ভূঞা, সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. নাজির উদ্দেন, সিলেটের সহকারী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্তসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন