এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বেইলি রোডে অগ্নিকান্ড কবলিত ভবনে ফায়ার এক্সিট না থাকায় হতাশ প্রধানমন্ত্রী

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ০২ মার্চ, শনিবার, ২০২৪ ০০:৫৫:৪১
বেইলি রোডে অগ্নিকান্ড কবলিত ভবনে ফায়ার এক্সিট না থাকায় হতাশ প্রধানমন্ত্রী

যুগভেরী ডেস্ক ::: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বেইলি রোডের বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি নির্গমন পথ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে এই পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত ও বহু আহত হবার খবর পাওয়া পাওয়া গেছে।  তিনি বলেন, ‘আমরা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি, তবুও মানুষ এতটা সচেতন নয়। আপনি একটি বহুতল ভবনে আগুন দেখেছেন যার কোনো অগ্নি নির্গমন পথ ব্যবস্থা নেই।’  শেখ হাসিনা ১ মার্চ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বীমা দিবস-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে একথা বলেন।  রাজধানীর বেইলী রোডে বৃহস্পতিবার রাতে বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকান্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেইলী রোডে একটি বহুতল ভবন হলেও সেখানে কোন অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। ভবন বা স্থাপনা তৈরির সময় তিনি সবসময় স্থাপত্যবিদদের অনুরোধ করেন যেন খোলা বারান্দা বা ভেন্টিলেশন এবং অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়।  সরকার প্রধান বলেন, ‘কিন্তু স্থাপত্যবিদরা সেভাবে নকশা করেন না আবার মালিকরা এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চায়না। ৪৬ জন মানুষ মারা গেছে। এরচেয়ে দু:খ ও কষ্টের আর কী হতে পারে। অথচ আমরা ফায়ার এক্সটিংগুইসার লাগানোসহ অগ্নি নির্বাপন পথের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ বার বার দিচ্ছি। সেটা কিন্তু তারা মানে না।’  শেখ হাসিনা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, দেখা যাবে এখানে কোন বীমাও করা ছিল না। কাজেই বিনিময়ে কিছু পাবেও না। এইসব ক্ষেত্রে সচেতনতা আসলে খুব বেশি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আরো ব্যাপকভাবে যাতে মানুষ সচেতন হয় সেই জন্য আপনারা (বীমা সংশ্লিষ্ট মহল) চেষ্টা করবেন, আমাদের তরফ থেকে আমরা করে যাচ্ছি।  তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যাতে আরও বীমার দিকে এগিয়ে আসে সে বিষয়ে আপনারা আরো যত্নবান হবেন যাতে বীমা দাবিগুলো মানুষ সহজে পেতে পারে।’  সরকার প্রধান বলেন, যারা অসদুপায় অবলম্বনকারি তাদের কথা আমি বলছি না। প্রকৃত পক্ষে যাদের প্রাপ্য তারা যেন সহজে পেতে পারে। এদিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে।  কারণ, দেখা যায় যারা দুই নম্বরী করে তারা আবার পার পেয়ে যায়। কারণ, তারা ম্যানেজ করে ফেলে। কাজেই কেউ যেন ম্যানেজ করতে না পারে আর সত্যিকার অর্থে যাদের প্রাপ্য তারা যেন সঠিকভাবে অল্পসময়ের মধ্যে বীমার টাকা পায় সেটাও ব্যাংকের মাধ্যমে আপনারা করে দিতে পারেন। এখনতো সুবিধা হয়ে গেছে। কাজেই সেদিকে আপনারা একটু দৃষ্টি দেবেন।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাইকে সচেতন করতে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বীমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ’কে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি।  অনুষ্ঠানে ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা, অর্থাৎ ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রয়োজনানুযায়ী ব্যাংক থেকেই বীমা পলিসি যাতে নিতে পারেন সেইজন্য প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ এর উদ্বোধন করেন।  প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতীয় বীমা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে বীমা দাবি পরিশোধের ভিত্তিতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।  তিনি দিবসটি উপলক্ষে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যেও পুরস্কার বিতরণ করেন।  অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।  অনুষ্ঠানে বীমা শিল্পের ওপর এবং ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ এর ওপর নির্মিত পৃথক দু’টি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।  উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এই অঞ্চলের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে সেই সময় বঙ্গবন্ধু এখান থেকেই দেশব্যাপী সংগঠন গোছানোর সুযোগ পান এবং বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফাও এখানে বসেই প্রণয়ন করেন। তাঁর এই যোগদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করে সরকার। এটি এখন ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়েছে। দিবসটি সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে।  অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে উদযাপিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘করবো বীমা গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।’  প্রধানমন্ত্রী বীমার দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে সচেতন হবার পরামর্শ দিয়ে কোন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ঘন ঘন আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে একটি ভয়াবহ চিত্র দেখতে পান বলে জানান। যেখানে প্রায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় কিছু মালপত্র, বর্জ্য রেখে ঐ কোম্পানির এক শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে ৪০ কোটি টাকা বীমা দাবি করা হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় বীমা কোম্পানির লোকজন যারা তদন্তে যান তাদেরকেও ম্যানেজ করার অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি যথাযথ তদন্তপূর্বক অর্থ ছাড় করারও পরামর্শ দেন।  তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা বীমার সাথে জড়িত অবশ্যই তারা এই বিষয়টাতে গুরুত্ব দিবেন। আর এই ধরনের ঘটনা যেন কেউ আর ঘটাতে না পারে।’
’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছিল এবং ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যা হারিয়ে গিয়েছিল তাঁর সরকার আবার তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার পর চতুর্থ মেয়াদেও নির্বাচিত হওয়ায় দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় আজকে উন্নয়নের ছোঁয়া সাধারণ মানুষের কাছে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।  সরকার প্রধান বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বছর বছর দেশের কিছু অঞ্চলে যে মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ হতো সেটা আর নেই এবং মানুষের জীবন মানও অনেক উন্নত হয়েছে।  ’৯৬ সালে প্রথমবার সরকারে আসার পরেই বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তা তিনি উন্মুক্ত করে দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার চায় দেশ আরও এগিয়ে যাক।  তিনি বলেন, এই জন্য আমরা ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুতসহ সমস্ত কিছুই বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সেক্ষেত্রেও আমি মনে করি ইন্সু্রেন্স করার ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে আরো সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী। সে বিষয়ে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন, সেটাই আমি কামনা করি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হলেও দুর্ঘটনা, দুর্বিপাক যে কোন সময় ঘটতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। সেক্ষেত্রে মানুষকে একটু সঞ্চয়মুখী করা, মানুষকে আরো উদ্বুদ্ধ করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া জরুরী। আর সেইক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স কিন্তু মানুষকে নিরাপদ জীবন দিতে পারে। কোন দুর্ঘটনা বা অসুখ-বিসুখ হলে এই বিষয়ে ইন্সুরেন্স করা থাকলে পরে মানুষ অন্তত নিশ্চিত থাকতে পারে বীমার টাকা পাওয়ার। সে বিষয় সম্পর্কে মানুষকে আরো জানানো দরকার।  সরকার প্রধান বলেন, মানুষ যাতে বীমার টাকা গ্রহণ করতে পারে সেই দিকে বীমা সংশ্লিষ্টদেরও নজর দিতে হবে। বীমা সহজীকরণের লক্ষ্যে আজ যে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ চালু করা হলো এইজন্য সংশ্লিস্টদের তিনি ধন্যবাদ জানান।  তিনি বলেন, তাঁর সরকার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় একের পর এক যখন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করেছিল তখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা (উন্নয়ন সহযোগী) প্রশ্ন তুলেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি এত ছোট এতগুলো ব্যাংক দিয়ে কী হবে? ‘আমার উত্তর ছিল আমাদের অর্থনীতি এত ছোট থাকবে না, অবশ্যই বড় হবে। সেই বড়তো আমরা করতে পেরেছি।’  প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ব্যাংকগুলো উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শাখা খুলতে যাচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো কাজ করছে। সেই সাথে এই বীমাগুলো যখন যুক্ত হবে এবং বীমার প্রিমিয়াম দেওয়া শুরু করে সবকিছু ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, অনলাইনে যখন সম্পন্ন করা যাবে, তখন কিন্তু মানুষের আর ঐ দ্বিধা থাকবে না। ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিমিয়াম জমা হবে। এইজন্য আলাদা করে জমা ও দিতে হবে না তামাদীও হবে না। কাজেই তাতে ইন্সুরেন্সেরও লাভ হবে ব্যাংকেরও সুবিধা হবে। ব্যাংকের কার্যক্রমও বাড়বে।  বীমা খাতের উন্নয়নে ‘অ্যাকচুয়ারি’ সৃষ্টিতে বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বীমা খাতে ‘ইউনিফায়েড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম’ বাস্তবায়নসহ এই খাতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীমা খাতে পেশাদারিত্ব ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’  অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনটিতে শুরুতেই তিনি বাঙালির অবিসংবাদিক নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং জাতীয় চারনেতাসহ ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।  শেখ হাসিনা বলেন, মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই মাসেই (১৭ মার্চ) জাতির পিতা জন্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। যা আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামান্য দলিলে মানুষকে উজ্জীবিতকারি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন