এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শাবি শিক্ষার্থীরা তৈরি করছে চালকবিহীন গাড়ি!

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ০৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার, ২০২৪ ১৩:১১:২৮
শাবি শিক্ষার্থীরা তৈরি করছে চালকবিহীন গাড়ি!

শাবিপ্রবি :: আমেরিকান বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’র আদলে দেশে প্রথমবারের মতো চালকবিহীন গাড়ি তৈরি করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘সিনার্বোটিক্স’ নামে একটি দলে কাজ করে এ চালকবিহীন গাড়িটি তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন গাড়িটির নাম রাখা হয়েছে ‘অটোমামা’। গাড়িটি একসাথে ৩ থেকে ৪ জন যাত্রী বহন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দলের প্রধান কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা নিহাল বেগ।

 

 

‘সিনার্বোটিক্স’ দলটি শাবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইলেক্ট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই), সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং(সিইই) ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত। দলটির দাবি ‘অটোমামা’ শাবি শিক্ষার্থীদের তৈরি করা দেশের প্রথম সফল ‘লেভেল ২ অটোনোমাস ইলেক্ট্রনিক ভিসেল’। গাড়িটি দেশের রাস্তায় চলাচল উপযোগী ডেটাসেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যেটি প্রাথমিকভাবে পাবলিক রাস্তায় চলাচলে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্যরা।

 

অটোমামা প্রজেক্টে টেকনিক্যাল টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে মির্জা নিহাল বেগ, আদ-দ্বীন মাহবুব ও নাইনাইয়ু রাখাইন। প্রোমোশন টিমে আছেন ইমতিয়াজ আহমেদ, অর্ণব পাল, সাফওয়াত আদিবা হিয়া, মো. সাকিবুল ইসলাম সৌরভ, ফয়সাল জামান, মো. মেহেদী হাসান ও মো. আসাদ শেখ।

 

দলের প্রধান মির্জা নিহাল বেগ বলেন, বাংলাদেশে অটোনোমাস ইলেক্ট্রনিক ভিসেল নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ক্যাম্পাসের যাতায়াত ব্যবস্থাকে মাথায় রেখে আমরা এটি তৈরি করেছি এবং সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের সীমিত রিসোর্স এবং ফান্ডের মাধ্যমে আমরা লেভেল ২ পর্যন্ত তৈরি করতে পেরেছি তবে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের লক্ষ্য এটাকে আরও উন্নত অর্থাৎ সম্পুর্ণ স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম হিসেবে ডেভেলপ করার। গাড়িটিতে আমরা সৌরশক্তি ব্যবহারের চিন্তাভাবনাও করছি এজন্য আমাদের ফান্ডের প্রয়োজন। কারণ ফান্ডের অভাবে টেকনিক্যাল টিমের সদস্যরা এটিকে ভালো মতো ডেভেলপ করতে পারছেন না।

 

গাড়ির কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা ‘অটোমামা’ নিয়ে কাজ শুরু করি। তবে মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের দেড়বছরের প্রচেষ্টায় লেভেল ২ পর্যন্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। যাত্রীসেবার পাশাপাশি গাড়িটি দিয়ে ফ্যাক্টরি, পর্যটন শিল্প ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ঝুকিপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে অটোমামা প্রজেক্টের সুপারভাইজার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুর রহমান বলেন, চালকবিহীন গাড়ি ‘অটোমামা’ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এরজন্য আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রোড সিনারিও কালেকশন করতে হয়েছে। ডেটা কালেকশনের প্রাইমারি গোলটা শেষ এখন আপাতত প্রথমে আমরা সাস্ট ক্যাম্পাসে এটা রান করাতে চাই। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন।

 

গাড়িটি নির্মাণের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল ডেটা কালেকশন, যার জন্য আমাদের টিম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সেখানকার রোড সিনারিও অনুযায়ী ডেটা কালেকশন করেছে। এছাড়া এই ডেটাগুলো শুধু কালেক্ট করলেই হয় না, রিয়েল টাইম অর্থাৎ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এরজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রসেসর যা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। প্রজেক্টটি দাঁড় করাতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার ফান্ডের জন্য রিসার্চ সেন্টারে আবেদন করেছি। প্রশাসনের কাছ বড় থেকে ধরনের ফান্ড পেলে আমাদের প্রজেক্টের কাজ পরিচালনা সহজ হবে।

 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় এ ধরনের উদ্ভাবনী কাজকে উৎসাহিত করি। অটোমামা প্রজেক্টের সাথে জড়িত টিমের সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই। টিমের পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন