নিজস্ব সংবাদদাতা, তাহিরপুর :: চলতি মৌসুমে রেকর্ড তাপমাত্রায় ধুঁকছে সিলেট অঞ্চল। তাপ বাড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাহিরপুর উপজেলার জনজীবন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে ফ্যান না থাকায় খোলা মাঠে বসে চলছে উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান।
বিদ্যালয়ের একমাত্র ঘরটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণকাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), তাহিরপুর। তবে আগেভাগে উপযুক্ত কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সাময়িকভাবে পাঠদানের জন্য অদূরে বেছে নেওয়া হয়েছে আনোয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ঘরের দুটি কক্ষ। তবে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা ব্যবহারের কোনো উপায় নেই। এতে প্রচ- গরমে ঘর দুটিতে নিয়মিত পাঠদান ও শ্রেণির স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে শিক্ষকরা বাধ্য হয়েছেন খোলা মাঠে পাঠদানে।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ভর দুপুরে তৃতীয় শ্রেণির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন শিক্ষক। তাদের পাঠদান চলছে খোলা মাঠে বসে। চলতি সপ্তাহে গরম বাড়ায় শিক্ষার্থীদের কষ্ট বেশি হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা। গরমে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। যারা আসে তারাও অতিরিক্ত গরমে ঠিক মতো পড়ায় মনোযোগ দিচ্ছে না। চলমান লোডশেডিংয়ে এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ অবস্থায় শ্রেণিকক্ষ থেকে শিশুদের গাছতলায় এনে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা, যাতে গরমে শিশুদের শারীরিক কোনো সমস্যা না হয়। শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছে এ ব্যাপারে।
আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফা আক্তার হলি জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে শ্রেণি কক্ষে বসাই যায় না। শিক্ষকরাই টিকতে পারেন না, সেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের পক্ষে এই গরমে টিনশেড ঘরে বসে ফ্যান ছাড়া ক্লাস করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যতদিন অসহনীয় গরম থাকবে, ততদিন গাছতলাতেই শিক্ষার্থীদের তিনি পাঠদান করাবেন। এতে তারা অন্তত অসুস্থ হয়ে পড়বে না।
আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিলন তালুকদার জানান, গরমের মধ্যে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। এ ছাড়া পাঠদানের কক্ষগুলোতে বৈদ্যুতিক ফ্যান নেই। দ্রুত সেখানে ফ্যান দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসমিনা বেগম জানান, তীব্র গরমের কারণে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে যায়। গরমের মধ্যে ওই শিক্ষক গাছতলায় ক্লাস নেন। তাঁর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। তবে সেই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ফ্যানের ব্যবস্থা করা জরুরি বলেও জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), তাহিরপুরের প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ খান জানান, আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ঘরটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য আনোয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিফট করা হয়েছে। তবে এমন পদক্ষেপের আগে সেখানে পাঠদানের যথাযথ পরিবেশ যাচাই করা হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে কিছু জাননি ওই কর্মকর্তা।
আনোয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল চন্দ্র দে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ঘরটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাদের পরিত্যক্ত একটি ঘর পাঠদানের জন্য দেওয়া হয়েছে। পরে আরও একটি কক্ষ দেওয়া হয়। তবে ঘরের কক্ষ দুটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ফ্যান ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন