এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শিশু শিল্পী ফারজিনাদের ঘর নির্মাণকাজ শুরুর নির্দেশ

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ১৫ মে, বুধবার, ২০২৪ ০৪:০৩:০০
শিশু শিল্পী ফারজিনাদের ঘর নির্মাণকাজ শুরুর নির্দেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, তাহিরপুর
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুশিল্পী ফারজিনা আক্তারের পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ আজ বুধবার থেকেই শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুরে ফারজিনার বাবা মো. সায়েমকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দেখা করার পর সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
‘ঘর না পেয়ে এলাকা ছাড়ল সেই ফারজিনার পরিবার’ শিরোনামে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
মো. সায়েম জানান, মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাঁকে ফোন করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করার জন্য বলা হয়। এরপর তিনি সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ এসে দুপুরে দেখা করেন। জেলা প্রশাসক তখন তাঁর সার্বিক অবস্থার খোঁজ নেন। তাঁর সামনেই বুধবার (১৫ মে) থেকে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। সেখানে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুচিত্রা রায়সহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক ফারজিনাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য মো. সায়েমকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হয়ে মো. সায়েম বলেন, ‘ডিসি স্যার বলছেন কালকু থাকি ঘরের কাজ শুরু অইব। আমারেও উপস্থিত থাকতে বলছেন। আমি এতে খুশি। ঘরটা পাইলে আমরার খুব উপকার অইব।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন। যেহেতু হাওর এলাকা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের একটা বিষয় আছে, তাই সম্ভব হলে কালই ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। না হলে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করতে বলেছেন। মো. সায়েমকে সেখানে থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুচিত্রা রায় ও তাহিরপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিক আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তাঁরা ফোন ধরেননি।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের দুর্গম এক গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফারজিনা আক্তার (৯)। তাদের জমিজিরাত নেই, নেই ঘর। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করে শিশুশিল্পী শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে আলোচনায় আসে ফারজিনা। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ফারজিনা পুরস্কার গ্রহণ করে। ওই সময় প্রথম আলোয় ‘শিশুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের টাকায় বাড়ি করতে চায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর ফারজিনার পরিবারকে সরকারিভাবে একটি ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ছড়া মৌজায় ফারজিনার পরিবারকে ১৭ শতক জমি দেওয়া হয়। ওই জমিতে একটি ঘর করে দেওয়ার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ের অনুকূলে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু সাড়ে চার মাসেও মাথা গোঁজার ঘর আর হয়নি। ঘরের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে হতাশ ফারজিনার বাবা মো. সায়েম। কিন্তু সাড়ে চার মাসেও সেই ঘর না পেয়ে ক্ষোভে-অভিমানে সোমবার পুরো পরিবার নিয়ে সুনামগঞ্জ ছেড়ে সিলেটে চলে যান সায়েম।
সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরের বাস টার্মিনালে সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা হওয়ার আগে মো. সায়েম বলেছিলেন, ‘আগে ত খাওয়ার চিন্তা, বাঁচার চিন্তা। কত জায়গায় যোগাযোগ করছি। কিন্তু ঘর আর হয় না। এলাকাত কাজ নাই, থাকার জায়গা নাই। কই থাকমু। বাঁচার লাগিই এলাকা ছাড়ছি।’

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন