এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মস্তিষ্কচালিত কৃত্রিম হাত তৈরি করল সিলেটের শিক্ষার্থী

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ০২ জুন, রবিবার, ২০২৪ ০৫:১৫:৪১
মস্তিষ্কচালিত কৃত্রিম হাত তৈরি করল সিলেটের শিক্ষার্থী

যুগভেরী রিপোর্ট
মো. ওয়াসিউন আলিম। ১৬ বছরের কিশোর। শিশু বয়স থেকেই আগ্রহ ছিল কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও স্মার্ট ফোনের প্রতি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে ঝুঁকতে থাকে নানা সায়েন্স প্রোগ্রামিংয়ে। করোনাকালীন সময়ে যখন ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ তখন মাথায় আসে মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা। ছোট মানুষ বড় কাজের স্বপ্ন দেখে। যাদের হাত নেই তাদের জন্য অনুভূতিসম্পন্ন কৃত্রিম হাত তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ওয়াসিউন।
আট মাসের পরিশ্রমে সফলতার মুখ দেখে সে। তৈরি হয় ওয়াসিউনের স্বপ্নের হাত। কৃত্রিম এই হাতটি কোন ধরণের রিমোট কন্ট্রোল ছাড়াই মস্তিষ্কের অনুভূতির সাহায্যে কাজ করে সুস্থ মানুষের হাতের মতনই। খুদে এই উদ্ভাবকের এই সৃষ্টিকর্ম দেখে বিস্মিত তার পরিবার, শিক্ষক ও পরিচিতজনেরা। এই উদ্ভাবনের জন্য ইতোমধ্যে সে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। ওয়াসিউন এবছর
সিলেট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করেছে।
ওয়াসিউনের জন্ম নাটোরের সিংড়া উপজেলার চকহরিপুর গ্রামে। শৈশবও কেটেছে সেখানে। বাবা ডা. মো. শাহরিয়ার
সিলেটের ওসমানীনগর ভার্ড চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত। মা ইফাত আরা ফেরদৌস গৃহিণী। বাবার চাকুরির সুবাধে ওয়াসিউনের পড়ালেখা ও বেড়ে ওঠা সিলেট শহরেই।
ওয়াসিউন আলিম জানায়, তার তৈরি কৃত্রিম হাতে প্লাস্টিক, থ্রিডি পয়েন্ট, মাইক্রো কন্ট্রোলার, ব্যাটারি ও ইলেক্ট্রনিক্স সেন্সরসহ সাধারণ কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্ভাবন হিসেবে কৃত্রিম হাত তৈরির প্রসঙ্গে সে বলে, আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ আছে যাদের হাত নেই। অনেকের হাত থাকলেও পক্ষাঘাতগ্রস্থ। তাদের জন্যই এই হাত। কৃত্রিম এই হাত দিয়ে তারা দৈনন্দিন সকল কাজ করতে পারবে। দীর্ঘ চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করে গত মে মাসে কৃত্রিম এই হাত তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
এই হাতের ব্যবহার সম্পর্কে কিশোর ওয়াসিউন জানায়, হাতটি সহজেই শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে নেওয়া যাবে। যার কব্জি নেই, তার জন্য এক মাপ ও যার কনুই নেই তার জন্য অন্য মাপে হাত তৈরি করা যাবে। এরপর নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দেওয়া যাবে কৃত্রিম হাতটি। এক্সটার্নেল কোন ডিভাইস ছাড়াই মস্তিষ্কের নির্দেশনা নিয়ে কৃত্রিম হাতটি স্বাভাবিক হাতের মতো কাজ করবে। নিজের উদ্ভাবিত কৃত্রিম হাতের মেধাস্বত্বের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ওয়াসিউন। হাত তৈরিতে তার ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানায় সে।
ওয়াসিউন ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ বিভাগীয় পর্যায়, ৪৪তম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ রোবটিকস অলিম্পিয়াডসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি সফলতা পেয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ মে
সিলেটে মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে তার উদ্ভাবিত কৃত্রিম হাতটি প্রশংসিত হয়। সম্প্রতি সে ডাক পেয়েছে বিশ্ব যুব গণিত অলিম্পিয়াডে। আগামী ৭-১১ আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
নিজের ছেলের এমন আবিষ্কারে আনন্দিত বাবা-মা। মা ইফাত আরা ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিভিন্ন সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করতো। তখন থেকেই ধারণা হয়েছিলো সে ভালো কিছু করবে। আলহামদুলিল্লাহ সে অসাধারণ একটি আবিষ্কার করেছে। যা আমাদের ও দেশের জন্য গর্বের। আমি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে আমার ছেলের এই উদ্ভাবনের ব্যাপারে সহযোগিতা চাই। যাতে তার এই উদ্ভাবন মানুষের কল্যানে আসে।’

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন