শাবিপ্রবি :: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত জামানের নেতৃত্বে আজ (৮ নভেম্বর) শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর শাবিপ্রবিতে ১৭ বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পর ২০২৪ এর ৩৬ দিন গৌরবময় জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে ৫৩টি “জিয়া ট্রি” (নিম গাছ) রোপণ করা হয়েছে। শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পূর্বপাশে ৫৩টি ‘জিয়া ট্রি’ বা নিম গাছ রোপণ করা হয়। “জিয়া ট্রি” রোপণ কর্মসূচির আয়োজক শিক্ষার্থীরা “গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামের এই দীর্ঘ ১৭ বছরের সংগ্রামে শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণে রাখতে এই বৃক্ষরোপন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপন শেষে এই স্থানটিকে ‘জিয়া ট্রি উদ্যান’ নামকরণ করেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীবৃন্দ “জিয়া ট্রি” রোপণের পাশাপাশি এ বিষয়ে নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশ করেন।
এসময় সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত জামান বলেন, “এমন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম, ঐক্য এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে আরও গভীরভাবে প্রোথিত করবে।স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শহীদরা যেভাবে জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই ইতিহাস আমাদের জীবনে অমূল্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই “জিয়া ট্রি” গুলো শুধু শহীদদের স্মরণ নয়, বরং তাদের সাহস ও দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবেও দাঁড়িয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। “জিয়া ট্রি” বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, “জিয়া ট্রি” তার ঔষধি ও প্রাকৃতিক কীটনাশক গুণাবলির জন্য প্রসিদ্ধ, যা আমাদের পরিবেশকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সহায়ক হবে।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম সাখাওয়াত শাকিব নিলয় বলেন, “সৃষ্টির অমূল্য দান হল গাছ, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে “।
পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ মাহমুদ বলেন, “গাছ না থাকা, আমাদের শিকড় না থাকার মতো, গাছ আমাদের আত্নার সাথে জড়িত। এটি কেবল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং একটি পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ। আমাদের দায়িত্ব শহীদদের আত্মত্যাগের মূল্য বোঝা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে তাদের দেখানো পথে হাঁটা।”
এসময় রসায়ন ডিপার্টমেন্টের মোহাম্মদ মাসউদ হোসেন শিপন বলেন, “গাছ হলো পৃথিবীর ফুসফুস, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন ও ইতিহাস-সচেতন করতে চাই।
পেট্রোলিয়াম এবং মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (PME) বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এ উদ্যোগের মাধ্যমে “জিয়া ট্রি” রোপণ কেবল শহীদদের স্মরণেই নয়, বরং পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্যেও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। “জিয়া ট্রি” তার প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও কীটনাশক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিবেশের উপকারে আসে। প্রতিটি রোপণকৃত গাছগুলো শহরের পরিবেশকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার এক স্থায়ী প্রতীক হিসেবে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
এই মহৎ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন কাজী জোনায়েদ (পিএসএস), নাইম মোরসালিন (সফটওয়্যার), আহাদ রহমান (গনিত),মিঠু সরকার (সফটওয়্যার), হাছিবুর রহমান (পিএসএস), মাহির আসিফ (বিবিএ), এস এম সাখাওয়াত শাকিব নিলয় (রসায়ন), রাহাত হোসেন (ইংরেজি), মোহাম্মাদ মাসউদ হোসেন শিপন (রসায়ন), প্রিন্স (সফটওয়্যার) আল আমিন (রসায়ন), খালিদ সাইফুল্লাহ (এনথ্রোপলজি), তানভির রহমান (এনথ্রোপোলজি), সাজ্জাদ খান (বিবিএ), অন্তু ঘোফ (পিএসএস), ইফতেখার আহমেদ (পিএমই) মেহেদী হাসান (পিএমই), মারুফ সাকলাইন (বিবিএ), লিমন আহমেদ (এনথ্রোপোলজি), জয় (সফটওয়্যার), মাসুদ আহমেদ (আইপিই), শরিফ মাহমুদ (পিএসএস), আহাদ তালুকদার (পিএসএস), নাসিমুল হুদা (পিএসএস) সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের কাছে এই “জিয়া ট্রি” রোপণ কর্মসূচি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেছে, শহীদদের স্মৃতি চিরস্মরণীয় রাখতে এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে এ ধরনের উদ্যোগের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি রোপিত “জিয়া ট্রি” শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে উঠবে, যা সমাজের মানুষকে অতীতের সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দেবে এবং নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দেবে। পরিবেশ সংরক্ষণে এমন কার্যক্রম শুধু প্রকৃতির উপকারে আসবে না, বরং মানুষকে একত্রিত করে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন