যুগভেরী ডেস্ক ::: এইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষাগুলো আর হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল ঘোষণা করেছে। বিকেলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অবশ্য এ বিষয়ে এখনও প্রজ্ঞাপন জারি করেনি মন্ত্রণালয়। এইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে অনুষ্ঠিত হবে। আর পুনরায় পরীক্ষা শুরুর তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দুই সপ্তাহ পেছানো হবে। তবে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবি জানান। কারণ হিসেবে তারা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অনেকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অবশেষে পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হলো। ওই বিষয়গুলোর মার্কিং কীভাবে হবে তা পরে জানানো হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘আমাদের দাবি একটাই-পরীক্ষা বাতিল চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই- পরীক্ষা বাতিল চাই’, ‘আপস না সংগ্রাম- সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘পরীক্ষা না বিকল্প- বিকল্প-বিকল্প’, ‘যুক্তি দিয়ে আন্দোলন- বন্ধ করা যাবে না’, ‘চলছে লড়াই-চলবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সকাল থেকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন পরীক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে দুপুরের দিকে তারা সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন।
পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান এবং আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তারপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে জানানো হয়, ১১ আগস্ট পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র বলেছিল, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন এলাকায় থানায় হওয়া হামলায় প্রশ্নপত্র রাখা ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। সেটি অনুমোদনও করা হয়।
এদিকে পরীক্ষার্থীরা সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে পরীক্ষায় বসার মতো অবস্থায় নেই বলে বিক্ষোভ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীরা চান, ইতিমধ্যে যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হোক। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক দাবি পূরণের ইতিবাচক আশ্বাসের তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরে আজ সকালে এইচএসসি পরীক্ষার বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা আরও ২ সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পরে জানানো হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন