এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কানাডার অভিবাসী জাতিসত্তা – বৈচিত্র্য নাকি ভোটব্যাংক?

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ২০ জুন, বৃহস্পতিবার, ২০২৪ ০১:৫৬:৩৭
কানাডার অভিবাসী জাতিসত্তা – বৈচিত্র্য নাকি ভোটব্যাংক?

মনীষ পাল ::: কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থায় গত একশো বছরের ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয় এবং ঘটনাবহুলI সেই ১৯০০ সালে বাইরের পৃথিবী থেকে কানাডায় পাড়ি জমায় বিপুল সংখ্যক মানুষI পূবের অতলান্তিক, পশ্চিমের প্রশান্ত আর উত্তরের সুমেরু মহাসাগর ঘেরা এই দেশটির উপকূল হাতছানি দিয়ে ডেকে নেয় তাদের , যারা নিজ বাসভূমিকে শেষ বিদায় জানিয়ে পথে নেমে আসে নতুন এই পৃথিবীর সন্ধানে I কিন্তু দশক যেতে না যেতেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং মহামন্দা অভিবাসনের এই জোয়ার কিছুটা থমকে দিয়ে যায়I কিন্তু সেই অচলায়তন ভাঙতে বেশি সময় লাগেনিI আজ বিশ শতকের শেষে এসে নতুন পৃথিবীর উদ্দেশে মানুষের মিছিল আবার ঠিক একশ বছর আগের জোয়ারের কথা মনে করিয়ে দেয়

বলা যায়, জন্মলগ্ন থেকেই অভিবাসন এদেশটিকে তৈরি করে দিয়েছে। এতো বিচিত্র জাতিসত্তা নিয়ে এরকম একটি দেশে সম্প্রীতি বজায় রাখা যদিও একটি দুরূহ কাজ, তবুও অভিবাসন দেশটিতে এযাবৎ অনেক উপকার বয়ে এনেছে। অর্থনৈতিকভাবে কানাডার ব্যবসাগুলো নিত্য-নতুন বাজারে ঢোকে। অভিবাসীরা নিয়ে আসে নিত্য নতুন ধারণা। চিন্তার বৈচিত্র্য একই বিষয়ের আলোচনায় বিচিত্র দৃষ্টিকোণ এবং মেধাকে সামনে নিয়ে আসে। সামাজিকভাবে কানাডা পৃথিবীর কাছে বিভিন্ন মত ও পথেরও একটা দৃষ্টান্ত। কানাডা দেশটি শুধু নানান জাতিগোষ্ঠী জড়ো করেনি, এই দেশটি গড়ে উঠে বহু মত ও পথের উপরও।

কিন্তু আজ, কেউ যদি বলে, এই উদাহরণ ব্যর্থ হতে চলেছে, তাকে কি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যাবে? দেশটিতে একদিকে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে উৎপাদনশীলতা। ফলস্বরূপ, অনেক সংকটের মধ্যে আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। আমাদের সামাজিক আদর্শগুলো আন্তঃধর্মীয় দাঙ্গার জোয়ারে যেন ডুবতে বসেছে। অনেকেই ধরে নেয় , ঘৃণা উস্কে দেয়া এ সমাজে এখন গ্রহণযোগ্য, পুরো একটা দেশ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার দাবি তোলাও যেন মামুলি বিষয়। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমের দেশগুলোতে বিভিন্ন অভিবাসী গোষ্ঠীর দাবি, পাল্টা দাবি থেকে এ কথার প্রমাণ মিলছে। অভিবাসীরা এমন সব বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছে, কানাডার প্রতিষ্ঠাতা পুরুষেরা কখনো ভাবেননি এরকমটি ও হতে পারে, আজ বেঁচে থাকলে তাঁরা অবশ্যই বহু সংস্কৃতির চর্চা বা চার্টার অফ রাইটস নিয়ে নতুন করে ভাবতেন।

আবার, অভিবাসীরা এদেশে নতুন জীবন গড়ে নিতেও যেন কুলোতে পারছে না, একই সাথে পারছে না নিজ নিজ দেশের সমস্যাগুলোও ছেড়ে আসতে। উল্টো তারা হয়ে পড়ছে বিদেশি সরকারগুলোর কখনও টার্গেট, বা কখনও এজেন্ট বা কখনও দাবার ঘুটি। বিদেশি সরকারগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অভিবাসীদের ব্যবহার করছে। কখনও ভয়ভীতি দেখিয়ে, বা কখনও লোভ দেখিয়ে কানাডার রাজনীতি এবং রাজনীতিকদেরকে প্রভাবিত করবার জন্য বিদেশি সরকারগুলো মরিয়া হয়ে লেগে পড়ছে। কানাডার রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়টা যেন বিষাক্ত দুর্গন্ধ হয়ে অটোয়ার বাতাসে ঝুলে আছে।

এটি বোঝার জন্য বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই, কানাডার রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে চলমান বিচার বিভাগীয় তদন্ত তার প্রমাণ। কানাডার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার মতে, চিন, ভারত, পাকিস্তান সবাই ২০১৯ এবং ২০২১ সালের নির্বাচন প্রভাবিত করবার জন্য নিজ নিজ দেশের অভিবাসীদের কাজে লাগিয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো জেনেও না জানার ভান করে থেকেছে। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই হস্তক্ষেপকে ব্যবহার করতেও দ্বিধা করছে না। চিন থেকে আসা ছাত্রদেরকে তৎকালীন এক এমপি প্রার্থীর মনোনয়নের সময় বাসে করে ভোট দিতে নিয়ে যাবার ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থার বদৌলতে লাগাতার গণমাধ্যমে ফলাও প্রচারের পর এ বিষয়টি আর গোপন থাকেনি।

এই হস্তক্ষেপ কানাডার গণতন্ত্রের কাঠামোর উপর সরাসরি হুমকি। এসব অপরাধের কোনোরকম শাস্তির লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না আর তাই হস্তক্ষেপকারী সরকার বা তাদের এজেন্টরা এদেশের নাগরিকদের মানবিক অধিকার খর্ব তো করছেই, সেই সাথে তাদেরকে দমন পীড়ন এবং ভয়ভীতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এতো গেলো শান্তির সময়ের কথা। কিন্তু এমন যদি হয়, কানাডা কোনো একটি দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, এবং সেই দেশ থেকে অভিবাসিত লোকজন এখন কানাডার নাগরিক এবং তারা কানাডার চেয়ে সেই আদি দেশের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, বা এমন হতে পারে, সেই দেশ কানাডার বিরুদ্ধে তার অভিবাসীদের কাজে লাগাচ্ছে। যেমন চিন। কানাডার সামরিক গোয়েন্দাদের মতে, চিন এবং রাশিয়া এখনই মনে করে তারা কানাডা এবং মিত্রদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। এই যুদ্ধ যদিও বেশিরভাগ এখন সাইবার দুনিয়ায় বা পরোক্ষ চালানো হচ্ছে, কিন্তু গোয়েন্দারা মনে করে, এই পরোক্ষ যুদ্ধ যে কোনো সময় প্রত্যক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্মুখ সামরিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। বেইজিং-এর সর্বসাম্প্রতিক হুমকি হচ্ছে, দক্ষিণ চিন সাগরের উপর দাবিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তারা শুরু করতে পারে যে কোনো সময়।

তাই কানাডার জাতীয় নিরাপত্তার উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে সবচেয়ে বেশি, তবেই পারবে কানাডা বিদেশি হস্তক্ষেপের গোড়া উৎপাটন করতে, সেই সাথে রক্ষা করতে বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে অভিবাসী জাতিগোষ্ঠীগুলোকে, এবং নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে কানাডার নাগরিকেরা বিদেশী হস্তক্ষেপের শিকার হবে না ।

আমরা জানি, আগের দুটো বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডা শত্রু দেশের অভিবাসীদের উপর কী ভূমিকা নিয়েছিল। সেটি মঙ্গলজনক কিছু ছিল না, বরং জানলে গা শিউরে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, কানাডার সরকার আট হাজার জার্মান এবং ইউক্রেনের অভিবাসীকে অন্তরীণ করে রাখে। তাছাড়া প্রায় আশি হাজার কানাডীয় নাগরিক, যারা ইউক্রেনের বংশোদ্ভূত, তাদেরকে বহিরাগত শত্রু হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রাখে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানি বংশোদ্ভূত বাইশ হাজার এবং উত্তরাধিকারসূত্রে ইতালিয় প্রায় ছয়শো কানাডীয় নাগরিককে সরকার অন্তরীণ করে রাখে। তাছাড়া একত্রিশ হাজার ইতালীয় কানাডিয়ানকে বহিরাগত শত্রু হিসেবে ঘোষণা করে এবং চার হাজার লোককে জাপানে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এইসব কানাডিয়ানদের স্বাধীনতা বলে কিছুই ছিল না, তারা ব্যবসা বা কাজের সুযোগ হারিয়েছিল। সেই সাথে সম্পত্তি। অধিকাংশই আর ফেরত দেয়া হয়নি। অথচ কোনো প্রমাণ ছিল না, তারা শত্রুপক্ষের সাথে আঁতাত করেছিল বা শত্রু পক্ষের প্রতি তাদের সহমর্মিতা ছিল। কানাডার ইতিহাসে এটা একটা লজ্জাজনক ঘটনা, যেটা সম্ভব হয়েছিল উগ্র বর্ণবাদের কারণে। এটির পুনরাবৃত্তি আর কেউ চায় না – না সরকার, না জনগণ।

আর কোনো সরকার যাতে এই বর্ণবাদের পুনরাবৃত্তি করতে না পারে, সেইজন্য প্রথম কাজ হবে এই দেশটির গণতন্ত্র সুরক্ষা। সেই সাথে এর অভিবাসী এবং দেশটির নিরাপত্তা। বিদেশি হস্তক্ষেপের তদন্ত হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু এটার দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনতে হলে, রাজনীতিকদের পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত নিজেদের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে উর্ধে তুলে ধরা।

অভিবাসীরা এই দেশটির তৈরির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু অভিবাসনের কারণে বর্তমানে দেশটি কি খণ্ড বিখণ্ড হবার ঝুঁকিতে আছে? গত বছরের এক জনমত জরিপের ফলাফলে এমন এক বেদনাদায়ক চিত্র ফুটে উঠেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি হামাস ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ এবং এর জেরে বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ বেড়ে যাওয়া নিয়ে ১৫০০ কানাডিয়ানদের উপর এই জরিপ চালায়। সেই জরিপের ফলাফল থেকে এমন কিছু বিষয় উঠে আসে, যা রীতিমতো উদ্বেগের।

বর্তমান সরকারের বিরামহীন উচ্চারিত স্লোগান ‘বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি’ – এই ধারণাটি এই গবেষণা জরিপে প্রত্যাখ্যান করা হয়। ছাপ্পান্ন শতাংশ তাদের উত্তরে বলে, যদিও বৈচিত্র্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের শক্তি, কিন্তু কিছু জাতিগোষ্ঠী সমস্যাও তৈরি করছে। সেই সাথে দিচ্ছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উস্কানি। একুশ শতাংশের মতে, কতিপয় জাতিগোষ্ঠী সমস্যা এবং সংঘাত দুটোর পেছনেই দায়ী।

যদি আপনার মনে হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রামীণ কানাডার স্কুলের গণ্ডি না পেরোনো বুড়ো শ্বেতাঙ্গ পুরুষের মতামত, তবে সেই ধারণা ভুল। জরিপ থেকে দেখা যায়, প্রায় সমান সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ (৫৬ শতাংশ) এবং অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসী (৫৫ শতাংশ) বিশ্বাস করে, বৈচিত্র্য একাধারে শক্তি আবার অন্য দিকে সমস্যা তৈরি করছে। কুইবেক এবং ইংলিশ কানাডাও এই ইস্যুতে সমানভাবে বিভক্ত। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, সরকারের প্রায় উচ্চারিত স্লোগানের বিরুদ্ধে নারীদের অবস্থান ৬০ শতাংশ, ৫১ শতাংশ পুরুষের তুলনায়। এই স্লোগানের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে স্কুল বা কলেজপড়ুয়া কানাডিয়ানদের (৫২ শতাংশ) তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের সংখ্যা অনেক বেশি (৬১ শতাংশ)। [সূত্র : লেজার পোল , নভেম্বর , ২০২৩]

রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। বাইরে থেকে আমদানি করা অনেক ভয়াবহ সংঘাতের সরাসরি ভুক্তভোগী এখানকার অনেক সম্প্রদায়। খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শিখদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলেছে, আর তার জের হিসেবে অনেক শিখ নিরাপত্তার অজুহাতে কানাডায় পালিয়ে এসেছে।

গত বছর সুদানি ছাত্ররা টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে সুদানের গণহত্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ভূমিকা না রাখায় – বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণবাদের অভিযোগ তাদের ।

অন্যভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের যাবতীয় সমস্যা কানাডার দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। একটা নিয়মের মধ্যে আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটির মোকাবেলা করতে কানাডা ব্যর্থ হয়েছে , আসলে যেভাবে এদেশটি জাতিগত বৈচিত্র্যকে ধারণ করেছে, সেটির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে এখানে। সংবিধানের আলোকে প্রণীত নীতিগুলো যেমন বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা, লিঙ্গ , ধর্ম, ও বর্ণের সমতা, প্রয়োগ করা হচ্ছে না রাষ্ট্রনীতিতে বা রাজনীতিকদের আচরণে। বরং উল্টোটা দেখতে পাই। যেমন বৈচিত্র্যের সুযোগ নিয়ে বর্ণবাদ, উগ্রজাতীয়তাবাদ বা অসহিষ্ণুতা প্রশ্রয় পাচ্ছে। আইডেন্টিটি পলিটিক্সের কারণে সর্বজনীন মূল্যবোধের চেয়ে ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তার উপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাল্টিকালচারিজম বা বহু সংস্কৃতির নামে জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ধর্মীয় পরিচয় জিইয়ে রাখতে রাজনীতিকরা ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে। এসব কিছুর পেছনে আর কিছু নয়, ভোটার সমীকরণ হচ্ছে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।

কঠিন সত্য হচ্ছে, নতুন দেশের মূল্যবোধ যদি অভিবাসীদের মধ্যে জায়গা করে নিতে না পারে এবং সেই কাজটিতে যদি রাষ্ট্র বা তার নীতিমালা ব্যর্থ হয়, তবে রাষ্ট্র নিজের অজান্তেই বিভক্তির বীজ বপন করে, সেই ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য শক্তি না হয়ে বরং সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে আর সেই সুযোগ নেয় বাইরের দেশ বা কোনো আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর কোনো শক্তি।

এর সমাধান কী হতে পারে! জরিপ থেকে জানা যায়, একান্ন শতাংশ কানাডিয়ান মনে করে, সরকার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তারা নবাগতদের উৎসাহ দিতে পারে, কানাডার উদারনৈতিক মূল্যবোধ এবং অন্য ধর্ম, বর্ণ এবং লিঙ্গের প্রতি সহনশীল আচরণকে আলিঙ্গন করবার জন্য। এজন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়মের অনুশাসন থাকা উচিত, অভিবাসীরা যেন কানাডার মূলধারার মূল্যবোধ এবং পরম্পরাকে আলিঙ্গন করে এবং যেসব আচার বা আচরণ সাংবিধানিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক, সেগুলোকে অভিবাসনের সময় সাথে করে বয়ে নিয়ে না আসে।

আসলে জাতিগত বৈচিত্র্য দিয়ে কানাডার সমাজকে আরো সমৃদ্ধ করতে হলে কানাডার রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের অনেক কাজ বাকি আছে এখনও। যে ইতিহাস এবং অর্জন নিয়ে এ দেশটির উৎপত্তি, সেই সমৃদ্ধ ইতিহাসকে উপনিবেশবাদী বলে অস্বীকার করবার প্রবণতা থেকে নেতৃত্বকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ অভিবাসী কানাডার চেয়ে অধিকতর বিপদজনক ভূখণ্ড থেকে পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে , নতুন জীবন গড়বার প্রত্যাশায়, কানাডার উদারনৈতিক মূল্যবোধ এবং মুক্ত জীবনের জন্যই নিজ নিজ জন্মভিটে থেকে নিজেদেরকে উপড়ে এনে এ দেশে ঠাঁই নেয়া। এখন এদেশের রাষ্ট্রনায়কদের উচিত, ভোটব্যাংকের দিকে না তাকিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে এই কথাগুলোই গলা উঁচিয়ে বলা।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন