যুগভেরী ডেস্ক ::: বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় কৃষক পর্যায়ে শুরু হয়েছে জিরার চাষাবাদ। কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে সর্বপ্রথম এ এলাকায় স্বল্প পরিসরে জিরার চাষ করছেন কৃষকরা।
ইতোমধ্যে জিরার গাছগুলো বড় হয়ে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। জিরার এমন ফলন দেখে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। সফলতার মুখ দেখবেন, এমনটি আশা করছেন তারা।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার দেউলী ও মোকামতলা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, মোকামতলাসহ কয়েকটি এলাকায় জিরা চাষাবাদ নিয়ে কৃষকের নানান কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে।
জানা গেছে, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী আকারে জিরার চাষাবাদ হচ্ছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। এখন শুধু গবেষণাগারেই নয়, কৃষক পর্যায়েও জেগেছে জিরা চাষে সম্ভাবনা। ফলে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা। আয় বাড়বে কৃষকের। কমবে আমদানি নির্ভরতা। শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিদ উদ্ভাবন করেছেন কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের উপযোগী জিরার একটি জাত। বারি জিরা-১ নামে জাতটিকে জাতীয় বীজ বোর্ড-২০২২ সালে অনুমোদনও দিয়েছে। শিবগঞ্জে প্রথম চাষে সফল হলে বাড়ানো হবে চাষের পরিধি।
কৃষি বিভাগ জানায়, বারি জিরা-১ জাতের জিরার গাছ লম্বায় ৪০-৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতার হয়। এর পাতার রং গাঢ় সবুজ। ফুলের রং গোলাপি। বাজারে বিক্রি হওয়া জিরার চেয়ে বেশি সুগন্ধি। ভালোভাবে চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫৫০ কেজি জিরার ফলন পাওয়া সম্ভব। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে জিরা অন্যতম। জিরা শীতকালীন মসলা জাতীয় ফসল। দেশে যে পরিমাণ জিরার চাহিদা তার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। অনেক গবেষণার ফলে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টায় কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের উপযোগী জিরার জাত আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষক পর্যায়ে চাষ উপযোগী এ জাতের জিরার গাছ বেঁচে থাকে ১০৫-১১০ দিন পর্যন্ত।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, জিরা চাষের জন্য উপযুক্ত হলো চরাঞ্চল এলাকার জমি। চরাঞ্চলের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় পানি ধরে রাখতে পারে না। ফলে চরের মাটিতে জিরা চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক। বগুড়ায় এর আগে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার এবং গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের ৬৫ জন কৃষককে জিরার বীজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জেও কিছু কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে জিরার চাষ শুরু করেন। ওই ৬৫ জন কৃষকের মধ্যে বগুড়ার ৩৫ এবং গাইবান্ধার ৩০ জন কৃষক রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে গড়ে পাঁচ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে জিরার চাষ শুরু করে সফলতা পেয়েছেন।
এছাড়া বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে দেড় বিঘা জমিতে জিরার চাষ করা হয়েছে। সেখান থেকে এবার প্রায় ৮০ কেজি জিরা পাওয়া যাবে। ওই দেড় বিঘা জমি থেকেই গত কয়েক বছর ধরে ৪০-৪৫ কেজি জিরা সংগ্রহ করা যেত। তবে তারও আগে পাওয়া যেত সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম জিরা। এবারই প্রথম ওই জমি থেকে উৎপাদিত জিরার পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ গবেষকরা সফল হয়েছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, জিরা একটি অতি মূল্যবান এবং চ্যালেঞ্জিং মসলা জাতীয় ফসল। কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমি ২৫০ গ্রাম জিরার বীজ পেয়েছিলাম। সেই বীজ ৮ শতক জমিতে গেল নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বপন করি। এখন আমার জিরার গাছে ফুল এসেছে। জিরা ফসলের রোগ-বালাই অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসলের তুলনায় একটু বেশি হয়ে থাকে। এ জন্য জিরা চাষে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে জিরার রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ প্রতিরোধে নিয়ম অনুযায়ী বালাইনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার চাষকৃত জিরার অবস্থা বেশ ভালো। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা না এলে বেশি পরিমাণ জিরা সংগ্রহ করা যাবে।
সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক হাবিবুল, মোস্তাফিজার রহমান জানান, কৃষি অফিসের সহায়তায় স্বল্প পরিসরে এবার প্রথম জিরার চাষ করেন তারা। এখন পর্যন্ত জিরার চারা ভালো আছে। ঘন কুয়াশা ছাড়া ক্ষতির আর কোনো আশঙ্কা নেই। আগামীতে তারা বাণিজ্যিকভাবে জিরার চাষ করবেন।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, অনেক চেষ্টার পর এখন এসে আমরা সফল হয়েছি। জিরা শীতকালীন ফসল হলেও জিরা চাষের জন্য কুয়াশা ক্ষতিকর। জিরার আবাদি জমিতে পানি জমে থাকা যাবে না। এমনকি মাটিও হতে হবে শুকনো। ভেজা মাটিতে জিরার চাষ একদমই হবে না। যেটুকু পানি না দিলেই না, শুধু সেটুকু পানি জমিতে দেওয়া যাবে। কিন্তু অনেক কৃষক জিরার জমিতে পানি দেন। যা এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মুজাহিদ সরকার বলেন, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী আকারে জিরার চাষাবাদ হচ্ছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। জিরার চাষাবাদ এ বছর স্বল্প পরিসরে হলেও আমাদের বাস্তবায়িত প্রদর্শনী থেকে উৎপাদিত জিরা বীজ হিসেবে ব্যবহার করে আগামী মৌসুমে এর আবাদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি ফলন ভালো হলে আগামীতে বগুড়ায় জিরার চাষ বাড়বে।
সফলতা পেলে আমদানির পরিমাণ কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন