এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে বন্যা : কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ০২ জুন, রবিবার, ২০২৪ ০৪:৪৬:৫৪
সিলেটে বন্যা : কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি

যুগভেরী রিপোর্ট ::
সিলেটের কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আবার কোথাও অপরিবর্তিত আছে। তবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নতুন করে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা আশা করছেন।
শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি। জেলার গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি অনেকটা কমেছে। অন্যদিকে সিলেট সদর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সিলেটে গতকাল শুক্রবার থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। শনিবার দুপুর পর্যন্তও বৃষ্টি হয়নি। তবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে। আজ নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নের ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ৩ হাজার ৩৪২ জন। জেলার ৮টি উপজেলার মোট ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট নগর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
এর আগে চার দিন ধরে ভারতে থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টিও হয়। এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িও হয়েছে প্লাবিত। তবে গতকাল থেকে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর উপজেলাসহ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অন্যান্য জায়গায় অপরিবর্তিত আছে।
কানাইঘাট : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেওয়ার পর কমতে শুরু করেছে বানের পানি। এখনও সুরমা ডাইকের ভাঙন দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার বিকেল ২টার দিকে তা কমে বিপদ সীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত বুধবার পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ডাইক ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে পৌর শহর সহ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা, প্রতিষ্ঠান, হাজারো বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সুরমা ও লোভা নদীর পানি কমতে শুরু করলে পৌর শহর সহ আশপাশ এলাকা বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হলেও প্রত্যন্ত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। যেসব এলাকার উচুঁ স্থান ও ঘর-বাড়ি থেকে পানি কমে গেলেও জলাদ্ধতার কারনে বানের কাদা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখনও শত শত মানুষ গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বন্যা কবলিত বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র সহ উঁচু এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি কমার সাথে সাথে কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়ছে এবং পানিবাহিত রোগ ব্যাপক হারে ছড়ার আশঙ্খা রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ার পূর্বেই সুরমা নদীর ভাঙন কবলিত ডাইকগুলো (নদী রক্ষা বাঁধ) দ্রুত মেরামত করার জন্য সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এছাড়াও তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত বানবাসী মানুষের খোঁজ-খবর নেন এবং শুকনা বিতরণ করেন।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন, থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বন্যা দেখা দেয়ার পর থেকে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বানবাসী মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ সহ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন