যুগভেরী রিপোর্ট
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে এই তিন উপজেলার বেশীর ভাগ নি¤œাঞ্চলের এলাকা। অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। পানিবন্দি মানুষরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন, লেঙ্গুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে। এই উপজেলা ১৩ টি ইউনিয়নে মোট ৫৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবন প্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
এছাড়া সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলায় নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেলা, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ ও বাওন হাওরসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র।
এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের বিভন্ন এলাকা। গ্রামীন সড়ক ডুবে যোগাযোগ ব্যাহত রয়েছে অনেক জায়গায়।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সার্বক্ষণিক তদারকি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইন নদী তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে বুধবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদী জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ২৪ ঘন্টায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৪৬ দশমিক ০১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, আগামী তিন দিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
কানাইঘাট: ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বন্যার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১২০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে সুরমা ও লোভা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। সকাল ১১টা থেকে কানাইঘাট বাজারে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করলে উত্তর বাজার, দক্ষিণ বাজার ও পূর্ব বাজারে হাটু থেকে কোমরপানি বিরাজ করছে। অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে খবরে আরো জানা যায়, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়কের গড়াইখাই ব্রীজ হতে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত সড়ক উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের লোকালয় সহ নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়াও পৌরসভার কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা ডাইকের পাকা সড়কে পূর্বের ভাঙ্গনের স্থানে পানির ¯্রােতে ভয়াবহ আকারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানির ¯্রােতে পাকা সড়ক ভেঙে তলিয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় ভাঙ্গনের স্থান দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে বিস্তৃর্ণ এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সুরমা ডাইকের গুরুত্বপূর্ণ ডালাইচর, গৌরিপুর হতে লক্ষীপ্রসাদ উত্তর ও দক্ষিণ গ্রাম পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকা তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকার লোকজন এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তারা বলছেন যেভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে যে কোন সময় ডাইক ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিবে। পাহাড়ি ঢলের তীব্র ¯্রােতের কারনে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, দিঘীরপাড়, সাতবাঁক, দক্ষিণ বাণীগ্রাম, রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের সুরমা ডাইকে বেশ কিছু স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বিগত ২০২২ সালে এসব এলাকার সুরমা ডাইক ভেঙে পুরো উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারনে তখন রাস্তাঘাট, ফসল, খামার সহ মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারনে সুরমা ও লোভা এবং আমরি নদীর পানি হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারণে সুরমা ডাইক ভেঙে যাতে করে কোন ধরনের বড় ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন ও থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার নদী ভাঙ্গন কবলিত সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন সুরমা ডাইকের ভাঙ্গন সহ ডাইকের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী হঠাৎ করে সুরমা নদীর পানি প্রবল শ্রোতে বেড়ে যাওয়ার কারনে সুরমা ডাইকের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সার্বক্ষণিক তদারকি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উজান থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারনে সুরমা ও লোভা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। সুরমা ডাইকের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভেঙে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে তা মোকাবেলায় উপজেলার সবকটি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন