এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট এমসি মাঠে তাফসীর মাহফিলের ২য় দিন সম্পন্ন

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ১০ জানুয়ারি, শুক্রবার, ২০২৫ ২৩:৪৫:২৩
সিলেট এমসি মাঠে তাফসীর মাহফিলের ২য় দিন সম্পন্ন

যুগভেরী ডেস্ক ::: বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে আনজুমানের ৩ দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের ২য় দিন সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া মাহফিল চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত।
মাহফিলের ২য় দিনের পৃথক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ফজলুর রহমান।

অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম মাদানী, মুফতী আলী হায়দার, মাওলানা মাশুক আহমদ, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও মাওলানা সাইফুল ইসলামের যৌথ উপস্থাপনায় মাহফিলে আলোচনা পেশ করেন শায়েখ শাহ ওয়ালী উল্লাহ, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী, আল্লামা সাঈদী পুত্র শামীম বিন সাঈদী, শায়খ সাঈদ বিন নুরুজ্জামান আল মাদানী, হাফিজ মিফতাহুদ্দীন, ক্বারী মাওলানা মতিউর রহমান ও মাওলানা সাদিক সিকান্দর প্রমূখ।

মাহফিলে ২য় দিনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আনজুমানের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহেদুর রহমান চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন আনজুমানের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ড. নূরুল ইসলাম বাবুল। ক্বেরাত পাঠ করেন ক্বারী আবুল হাসনাত বেলাল ও ক্বারী আবু জাফর। মাহফিল চলাকালে হামদ-নাত পরিবেশন করেন দিশারী শিল্পী গোষ্ঠী, আল ফালাহ সাংস্কৃতিক সংসদ, তারান্নম শিল্পীগোষ্ঠী ও সুরমা সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীবৃন্দ।
মাহফিলে আলোচনা পেশকালে ইসলামী চিন্তাবিদ শায়েখ শাহ ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ইসলাম নিছক সাধারণ একটা ধর্ম নয়। কারণ দুনিয়ায় অনেক ধর্ম রয়েছে। ইসলাম হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের মৌলিক দায়িত্ব। দেহ থাকলেই মানুষ হওয়া যায়না, প্রাণ থাকতে হয়। কুরআন আমাদের প্রাণের স্পন্দন। তাই কুরআনকে জীবন বিধান হিসেবে মেনে নেয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নিজেদেরকে মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ^ব্যাপী ইসলামের শত্রুরা একত্রিত হলেও ইসলামপন্থীরা দ্বিধা-বিভক্ত। ফলে মুসলমানরা মার খাচ্ছে। মুসলিম উম্মাহকে এক হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ১২ বছর পর আল্লামা সাঈদী (র.) স্মৃতি বিজড়িত এই মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অথচ আমাদের কুরআনের পাখি আজ নেই। তবে কুরআনের পাখিকে যারা শহীদ করেছে ওলী-আউলিয়ার এই ভুমি তাদের ক্ষমা করেনি, বরং ইতিহাসের শিক্ষা দিয়েছে। লক্ষণ সেন ও গৌড়গোবিন্দের মতো তাদের উত্তরসুরীরাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। গৌড়গোবিন্দ-লক্ষণ সেন যেমন ফিরে আসতে পারেনি। তাদের উত্তরসুরীরাও এই দেশে আর ফিরতে পারেনা। এজন্য কুরআনের আলোয় সমাজকে আলোকিত করে দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে।

মাওলানা সাদিকুর রহমান আল আজহারী বলেছেন, দেশের তাফসীরুল কুরআনের মাহফিলগুলোতে সাঈদী (র.) এর জন্য হাহাকার অনুভুত হচ্ছে। এদেশে ইসলামের শিকড় অনেক গভীরে। চাইলে কেউ ইসলামের আলো নিভিয়ে দিতে পারবেনা। বিগত ১৫ বছর ধরে ইসলামপন্থীরা সব দিক থেকে লাঞ্চিত-বঞ্চিত হয়েছেন। আমাদের তরুণ প্রজন্ম অসীম সাহস নিয়ে দেশকে ইসলামের জন্য উর্বর করে দিয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা সকলেই মানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। সমাজের সকল স্তরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করতে চাই। কিন্তু সমাজের নেতৃত্ব দুর্নীতিবাজ- নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের হাতে তুলে দিতে চাই। এতে দেশ-জাতি ও সমাজ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এখন থেকে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাতের নির্বাচন করতে হবে। তাহলে দেশ জাতি ও সমাজ উপকৃত হবে।

আলোচনা পেশ কালে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) এর ছেলে শামীম বিন সাঈদী বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশে কুরআনের রাজ কায়েম করা। শুধুমাত্র এই কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী (র.) এর উপর সীমাহীন জুলুম নিপীড়ন চালিয়েছে। সকল জুলুম উপেক্ষা করে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন আপোষহীন। তাই ভারতের প্রেসক্রিপশনে হাসপাতালে আল্লামা সাঈদীকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। ২ হাজার ছাত্র-জনতার জীবন ও ৪০ হাজারের বেশী ছাত্র-জনতা রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ এক যুগ পর কুরআনের পাখির স্মৃতি বিজড়িত মাহফিলে উপস্থিত থাকতে পারায় আমি কৃতজ্ঞ।

শামীম সাঈদী আরো বলেন, কুরআনের কথা বলার কারণে আদর্শিক মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে বিচারের নামে প্রহসন চালিয়ে ফরমায়েসী রায়ে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের সাজা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে গোটা দেশের মানুষ ফুসে উঠে। আমার সিলেটের ভাইয়েরাও সেই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। আমরা সিলেটের তৌহিদী জনতার কাছে ঋণী। ফ্যাসিস্ট সরকার যখন বুঝেছিল যে আল্লামা সাঈদীকে ফাসি দিয়ে হত্যা করা যাবেনা। তখন আমৃত্যু কারাদন্ডের ফরমায়েসী সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখে। এতেও পতিত ইসলাম বিদ্বেষী সরকার ক্ষান্ত হয়নি। একটা সময় যখন স্বৈরাচারী সরকার বুঝতে পেরেছিল তারা কোনভাবেই ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা। ঠিক তখনই ভারতের প্রেসক্রিপশনে আল্লামা সাঈদীকে হাসপাতালে নিয়ে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদীর শেষ স্বপ্ন কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এর প্রতিশোধ নেবো। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের, সমাজ হবে কুরআনের।
শেষ দিন (১১ জানুয়ারী) শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহিলাদের জন্য বিশেষ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এসময় মাঠে পুরুষের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এছাড়া দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। শেষ দিনের মাহফিলে তাফসীর পেশ করবেন আল্লামা ইসহাক আল মাদানী, ড. মিজানুর রহমান আজহারী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, মুফতী মাওলানা আমীর হামজা, শায়খ হাফিজ মাওলানা আবু সাঈদ ও অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী প্রমূখ।

এর আগে মাহফিলের ১ম দিন বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) তাফসীর পেশ করেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আমীন, মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা কমর উদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা আব্দুল হাই জিহাদী, শায়খ আব্দুল হক, ড. মাওলানা এএইচএম সোলাইমান ও মাওলানা মাশুক আহমদ।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন