এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

গোয়াইনঘাটে সরকারি জলমহাল থুবুরি বিলে অবৈধভাবে নির্মাণ হচ্ছে বেড়িবাঁধ-উপজেলা প্রশাসের অভিযান

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ০৯ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার, ২০২৫ ১৮:৩২:০১
গোয়াইনঘাটে সরকারি জলমহাল থুবুরি বিলে অবৈধভাবে নির্মাণ হচ্ছে বেড়িবাঁধ-উপজেলা প্রশাসের অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক গোয়াইনঘাট :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় সরকারী সম্পত্তি শিলচান্দ জলমহালের থুবুইর বিল দখলের পায়তারা চালাচ্ছে একটি চক্র। ইতিমধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে চক্রটি। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা মূল্যের রাজস্ব ধ্বংসের আশংঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) সরেজমিনে অভিযানে গিয়ে এ চক্রের সদস্যদের রোষানলে পড়েন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুল ইসলাম। জানা যায়,থুবরিবিল -শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপের ইজারাদার পূর্ব দিঘিরপার রুপালি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড। এ বিষয়ে থুবরিবিল -শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপের ইজারাদার পূর্ব দিঘিরপার রুপালি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি সরকারি বিধি মোতাবেক ৬ বছরের জন্য বছর প্রতি ৫৮ লক্ষ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা রাজস্ব প্রদান সাপেক্ষে ইজারা গ্রহন করেন। থুবরি- শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপটি ইজারা গ্রহনের পর থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের বীরকুলি গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মনাফ উক্ত জলমহাল গ্রুপের ক্ষতি সাধনের লক্ষে মৎস্য বিচরণ এলাকায় বেড়িবাঁধের পরিকল্পনা করে। ইতিপূর্বে থুবরি- শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপের সাবেক ইজারাদারের সাথে মনাফ বাহিনী এরকম আচরণ করায় প্রায় কুড়িটি মামলায় শিকার হন আব্দুল মনাফ। ফখরুল ইসলাম জানান, থুবরি- শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপের সীমানা নির্ধারণের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে বিগত ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একটি আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ভুমি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে থুবরি জলমহালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সালুটিকর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন, সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এ এসআই ও তোয়াকুল ইউনিয়ন বিট কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার।
এ বিষয়ে বীরকুলি গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মনাফের সাথে কথা হলে তিনি জানান,বেড়িবাধ নির্মাণে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।গ্রামবাসী তাদের উদ্যোগে হাওরে যাতায়াতের জন্য ও বোরো মৌসুমে বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা যাতে ভালোভাবে আসতে পারেন তার জন্য রাস্তা নির্মাণ করছে। ইজারাদার আমার ব্যাপারে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বীরকুলী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার শামসুদ্দিন আল আজাদ বলেন,সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে গ্রামের মানুষের হাওরে যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা করে দিয়েছিলেন।বর্তমানে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে হাওরে গরু বাছুর ও কৃষকরা বোরো ধান নিয়ে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য পুনরায় রাস্তাটি সংস্কার করছেন গ্রামবাসী। গ্রামের গরু বাছুর যাতে বন বিভাগের জায়গায় গিয়ে বন বিভাগের সম্পত্তি নষ্ট না করতে পারে সেই সুবিধাতে রাস্তাটি সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সালুটিকর ইউনিয়ন ভুমি উপসহকারী কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন বলেন, থুবরি- শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপের অন্যতম জলমহাল থুবরি জলমহাল। এ জলমহালে গিয়ে দেখা যায়, বিরকুলি গ্রামের ইউনুস আলী ও পিয়ার উদ্দিনের নেতৃত্বে ও শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে দানবযন্ত্র ৯ পয়েন্ট ৩ টি স্কেভেটর দিয়ে সরকারি জলমহালে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। সরেজমিনে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুল ইসলাম অবৈধ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলে বিরকুলি গ্রামের ইউনুস আলী মোবাইলে গ্রামের মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে অস্রস্বস্র নিয়ে থুবরি জলমহালে আসার নির্দেশ দেয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৩ টি স্কেভেটরের চাবি নিয়ে আসেন।পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করার অঙ্গীকারে চাবি ফেরত দেন এবং ঘটনাস্তল থেকে স্কেভেটর সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। শরিফ উদ্দিন আরো জানান, ইতিপূর্বে প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে ফুলারকান্দি ও শিমুল বিলে বনবিভাগের শতশত একর জমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এ বাহিনী। যার কারণে গোয়াইনঘাট থানা ও বন আইনে বেশকটি মামলা রুজু করে বনবিভাগ।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুল ইসলাম বলেন, থুবরি- শিলচান্দ জলমহাল গ্রুপের ইজারাদার পূর্ব দিঘিরপার রুপালি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সরেজমিনে পরিদর্শন করি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বীরকুলি গ্রামের ইউনুস আলী ও পিয়ার উদ্দিনের নেতৃত্বে ৯ পয়েন্টের ৩ টি স্কেভেটর দিয়ে সরকারি জলমহাল ও বনবিভাগের কয়েকশত জমির উপর দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলমান রয়েছে। অবৈধ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধে ৩ টি স্কেভেটরের চাবি নিয়ে আসি এবং কাজ বন্ধ ও সরকারি জমি থেকে স্কেভেটর সরিয়ে নেওয়ার শর্তে ইউনুস আলী ও পিয়ার উদ্দিনের উপস্থিত অঙ্গীকারাবদ্ধে চাবি ফেরত দেই।এছাড়াও অবৈধ ভাবে সরকারি জমি দখলের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন