যুগভেরী ডেস্ক ::: দেশের খোলাবাজারে ডলারের বিক্রি স্বাভাবিক থাকলেও ভারতীয় রুপির কোনো ক্রেতাই খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানীর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। সপ্তাহের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ৪-৫ পয়সা কমেছে রুপির মান। পাশাপাশি বিক্রিও তলানিতে নেমেছে।
মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় ডলার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ই আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দূতাবাস থেকে বেশকিছু কর্মী দেশে ফিরিয়ে নেয় ভারত। পাশাপাশি ভিসা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করে দেশটি। পরে স্বল্প পরিসরে মেডিকেল ও স্টুডেন্টসহ জরুরি ভিত্তিতে ভিসা দেয়া শুরু করে ভারতীয় হাইকমিশন। তবে ভ্রমণসহ বেশকিছু ভিসা কার্যক্রম বন্ধই থেকে গেছে।
এদিকে সমপ্রতি ইসকন নেতা চিন্ময় দাশের গ্রেপ্তার ইস্যুতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া খবর প্রচার করে দাবি করা হয় বাংলাদেশে সনাতনীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। একই বিষয়ে ভারতের শাসক দল বিজেপি’র নেতারা বাংলাদেশিদের কটাক্ষ বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকে। এ ছাড়া গত ৩রা ডিসেম্বর ত্রিপুরায় বাংলাদেশি উপ-দূতাবাসে হামলা চালায় উগ্রবাদী হিন্দুরা। এর ফলে মিশনটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশ বিরোধী এমন অবস্থানের পর যাদের বৈধ ভারতীয় ভিসা আছে তারাও দেশটিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
সাধারণত বাংলাদেশিরা ভারতীয় রুপি নিয়ে যান মেডিকেল ও ভ্রমণ বাবদ খরচের জন্য। কিন্তু গত এক মাসে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান থাকায় রুপির বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। এ ছাড়া স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম বন্ধ ও ভারতমুখী যাত্রী কমে যাওয়ায় ঢাকায় কমেছে রুপির মান। ভারতীয় রুপি বিক্রির জন্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো দাম চাচ্ছে প্রতি রুপি ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৪ পয়সা পর্যন্ত, যা আগের সপ্তাহে দাম ছিল ১ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা।
মেক্সিকো এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা রুবেল জানান, আগে দিনপ্রতি ১-২ লাখ রুপি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ১৫ দিনেও তা বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে রুপির ক্রেতা নেই বললেই চলে, যা কিছু মানুষ আসছেন তারা নিজেদের কাছে থাকা রুপি বিক্রির জন্য।
খোলাবাজারের ডলার বিক্রেতা খলিল বলেন, ভারতীয় রুপির বিক্রি মোটেই নেই। দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিক্রি কমে গেছে। দেশি টাকায় রুপিপ্রতি দাম কমেছে ৪-৫ পয়সা। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ভারতীয় রুপি বিক্রি হতো। এখন এক রুপিও বিক্রি হয়নি। এছাড়া রুপির দামও কমে যাচ্ছে।
আরেক ডলার বিক্রেতা হোসেন মিয়া জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসা বন্ধের পর রুপির বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। আগে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬ লাখ টাকার রুপি বিক্রি হতো। গত এক সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মূলত ট্যুরিস্টরা ভারত থেকে আসার সময় রুপি নিয়ে আসতেন, সেগুলো আমরা কিনে রাখতাম। আবার বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন, তাদের কাছে বিক্রি করতাম। এখন ভারত থেকে ট্যুরিস্ট আসা যেমন কমে গেছে, তেমন দেশ থেকেও কোনো ট্যুরিস্টই যাচ্ছেন না। ফলে আমাদের কাছে রুপির মজুত কমেছে, পাশাপাশি বিক্রিও ঠেকেছে তলানিতে। বাজারে রুপির ক্রেতা খুব কম হওয়ায় রুপির দামও কমে যাচ্ছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন