যুগভেরী ডেস্ক ::: কোটা সংস্কার ইস্যুতে আন্দোলন চলাকালে হামলার অভিযোগে সিলেটে আরও দুটি মামলা হয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বৃহস্পতি ও বুধবার এ মামলা দুটি করা হয়। এসব মামলায় সিলেটে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দুজন সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৭২ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেনের আদালতে স্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করেন সিলেট নগরের শিবগঞ্জ খরাদিপাড়া এলাকার সৈয়দ আকরাম আল সাহান (৪২)।এ মামলায় ১৮২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী (সিআর ফাইলিং) মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর আদালত সেটি আমলে নিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে তদন্ত করার জন্য আদেশ দেন।
মামলায় প্রথম ও তৃতীয় নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকার ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। দ্বিতীয় আসামি হিসেবে আছেন সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে আজাদুর রহমান আজাদ, জগদীশ চন্দ্র দাস, আফতাব হোসেন খান, আবদুর রকিব, রুহেল আহমদ, আবদুল খালিক, আবুল কালাম আজাদ, হুমায়ুন কবির ও ফজলে রাব্বি চৌধুরী রয়েছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট ও সিটি পয়েন্টে আসামিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে পিস্তল, রাইফেল, বন্দুক, কাটা রাইফেল, শটগানসহ নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে দা, ডেগার, কিরিচ, লম্বা চাকু, লোহার রড ও পাইপ, হকিস্টিকসহ নানা দেশি-বিদেশি অস্ত্র ছিল। তাদের হামলায় অনেকে আহত হন। ওই দিনের ঘটনা বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলেও প্রচারও হয়।
মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের পাশাপাশি সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক দাস, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র প্রমুখ।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, আদালতের আদেশ সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে বুধবার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করেন সিলেট নগরের তোপখানা সুরমা ভ্যালি এলাকার বাসিন্দা মো. রাশেদ আহমদ।
মামলায় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী রিপন চন্দ্র দাশ বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর আদালত সেটি আমলে নিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানা–পুলিশকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, রঞ্জিত চন্দ্র সরকার ও হাবিবুর রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফজলুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের এপিএস কয়েছ চৌধুরী, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ প্রমুখ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট নগরের সুরমা মার্কেট পুলেরমুখ এলাকায় বাদীসহ শতাধিক মোটরসাইকেলের একটি মিছিল হয়। এ সময় আসামিরা মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালান। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাদী মো. রাশেদ আহমদকে হত্যা করতে গুলি চালালে তিনি বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। রাশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা তাঁকে রামদা, কিরিচ ও চাপাতি দিয়ে আঘাত করেন। অভিযুক্তরা হাত বোমা, পেট্রল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক তৈরি করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন