আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
ইসরায়েলের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইরান টের পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।গতকাল রবিবার তিনি বলেছেন, ‘আমরা সন্ধ্যা থেকেই রাতের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ইঙ্গিত পাচ্ছিলাম।’ তবে এর বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি। আজ সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের হামলাকে ‘অতিরঞ্জিত কিংবা কমিয়ে’ দেখা ঠিক হবে না। তিনি তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশোধ বা পাল্টা পদক্ষেপের কথা বলেননি।
প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান অবশ্য বলেছেন, ইরান ওই হামলার ‘যথাযথ জবাব দেবে’। তবে তিনি বলেছেন, তেহরান যুদ্ধ চায়নি।
ইসরায়েল বলছে, ইরানের করা হামলার জবাব দিতে তারা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। গত ১ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় দুশো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল।
রবিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সিস্টেম বিকল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর সক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
‘হামলাটি ছিল সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী এবং লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে,’ নেতানিয়াহু এক অনুষ্ঠানে বলছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতদের স্মরণে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে (ইরানের) অবশ্যই একটি সহজ নীতি অনুধাবন করতে হবে: যেই আমাদের আঘাত করবে, আমরা তাকে আঘাত করব।’
ইরানের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের হামলার প্রভাবকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তারা বলেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দেওয়া হয়েছে। আর যেগুলো ঠেকানো যায়নি সেগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সামান্য ক্ষতি করেছে।
ওই হামলার পর প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, ‘এটা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন যে তারা কীভাবে ইরানি জনগণের ইচ্ছে ও শক্তিকে ইসরায়েলি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন এবং দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেবেন।’
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানও তার দেশের সর্বোচ্চ নেতার সুরেই কথা বলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমাদের দেশ ও জাতির অধিকারকে সমুন্নত রাখব।’
তবে পর্যবেক্ষকরা যেভাবে চিন্তা করেছিলেন তার চেয়ে ইসরায়েলের হামলার মাত্রা ছিল অনেকটাই সীমিত। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই ইরানের তেল ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা না করার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করেছে।
পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের ওই হামলার পাল্টা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, পাল্টাপাল্টি হামলার যে চক্র তা ওই অঞ্চলকে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এদিকে লেবাননে ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ এবং গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের লড়াই অব্যাহত আছে। রবিবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পরে লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণে ওই হামলায় মোট ২১ জন নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে গাজায় আল শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি স্কুল-কাম-আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলার নয়জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১২শ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং জিম্মি করা হয়েছিল আরও ২৫১ জনকে। এরপর গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা