
যুগভেরী ডেস্ক :::
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত কবি নইমুল হকের চার অবুঝ শিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মায়ের সামনে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যত। পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে তারা এখন পাগলপ্রায়। প্রশাসনের কাছে নিহত কবি পিতার হত্যাকারীদের বিচার চায় চার অবুঝ শিশু।
সরেজমিন দেখা যায়, নইমুল হকের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহরিন, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তারিন, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিন ও একমাত্র ছেলে এসএসসি উর্ত্তীণ মাহিনের চোখের জল যেন থামছেই না। বাবার সঙ্গে কাটানো আনন্দের সময়গুলো স্মরণ করে হাউমাউ করে কাঁদছে তারা। নইমুল হকের ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মা অজুফা বেগমের আহাজারি এবং মাসনিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী সানজিদা সুলতানা রুবির ভাবলেশহীন চাহনি গ্রামে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। গত ৪ অক্টোবর উপজেলার মাতারগাঁও গ্রামে জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান নইমুল। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।
জানা যায়, উপজেলার মাতারগাঁও মৌজায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস খতিয়ানের ভূমি রয়েছে। মাতারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ওই ভূমি খেলার মাঠ, গোচারণ, ধান মাড়াই কাজে গ্রামের লোকজন ব্যবহার করে। ভূমিতে থাকা কয়েকটি ডোবা থেকে অর্জিত আয় মসজিদ, উচ্চ বিদ্যালয়সহ গ্রামের উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়।গ্রামের প্রভাবশালী মকবুল আলমসহ কয়েক বাসিন্দা ওই সরকারি ভূমি অবৈধভাবে দখল করে বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করলে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে। গেল বছরের ৮ আগস্ট দিরাই থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় গ্রামের সকল এজমালি ও ডিসি খতিয়ানের ভূমি উন্নয়নের স্বার্থে ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্তে দুই পক্ষের সম্মতিতে লিখিত আপোষনামা সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে মকবুল আলম তার দখলে থাকা সরকারি ভূমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। স্থানীয় প্রশাসন এ নিয়ে আলোচনার জন্য একাধিকবার ডাকলেও সায় দেননি। সরকারি ভূমি উদ্ধারে গ্রামবাসীর উদ্যোগে সামনের সারিতে ছিলেন কবিতা ও ছড়া রচনা করে স্থানীয়ভাবে কবি পরিচিতি পাওয়া নিহত নইমুল হক। এ কারণে প্রতিপক্ষের আক্রোশের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেন তিনি।
নিহত নইমুলের বৃদ্ধ মা অজুফা বেগম বলেন, আমার ছেলের বউ অসুস্থ। কোন কাজ-কাম করতে পারে না। জমির কাজ, ঘরের রান্না, আমাদের সবার দেখাশোনা নইমুল একাই করতো। তাকে হত্যা করে আমাদের পরিবারটিকে নি:স্ব করে দেয়া হয়েছে। নইমুল হকের ৩ মেয়ে ও ছেলে বাবার সঙ্গে কাটানো কিছু সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতিচারণ করে বলেন, যারা আমাদের বাবাকে খুন করেছে, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।
মাতারগাঁও গ্রামের সাইফুর রহমান বলেন, নইমুল হক সংস্কৃতিমনা ছিলেন। গান-কবিতা লিখতেন। প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নইমুল হকের খুনিদের গ্রেপ্তার করার দাবী করছি।
দিরাই থানার অফিসার (ইনচার্জ) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রামের সরকারি খাস ভূমি নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত নইমুল হকের সত ভাই আবু মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্য আসামী ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন