যুগভেরী ডেস্ক ::: আন্তার্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে 'আমরা গুম পরিবার'র ডাকে সিলেটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।গত শুক্রবার বেলা ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন গুম হওয়া ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনারের বোন তাহসিন শারমিন তামান্না।
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব, জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক শাকিল মুর্শেদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালাললী পংকি, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
গুম হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন- নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের ভগ্নিপতি শামীম আহমদ, গুম হওয়া জুনেদ আহমদের ভাই হাসান মঈনুদ্দিন আহমদ মঈনুল ও গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের দিনারের ভাগ্না ঈশান আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করেছিলাম এরই মধ্যে ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ ও আনসার আলীকে ফিরে পাব। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা আশা করব, আমাদের গুম থাকা স্বজনদের বিষয়ে সরকার সুনির্দিষ্ট প্রদক্ষেপ নেবেন, জাতিকে আস্বস্ত করবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অনতিবিলম্বে আমাদের গুম হওয়া নেতৃবৃন্দের অবস্থান পরিষ্কার করুন, আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, স্বাধীন দেশে ১২ বছর থেকে স্বজনদের অপেক্ষায় থাকতে হয়, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশে স্বাধীনতা ছিলনা, আমরা বাকরুদ্ধ ছিলাম। দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রামের পর ছাত্রজনতার অভূত্থ্যানের পর আজো আমরা আমাদের প্রিয় নেতাদের প্রতিক্ষায় রয়েছি। সরকার পতনের পর যখন মানুষ আয়নাঘর থেকে ফিরছিলেন, আমরাও আশায় ছিলাম আমাদের নেতারা ফিরে আসবেন। ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ, আনসারকে খোঁজে ফিরছি আমরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বলতে চাই, আর যেন মানববন্ধন ও আন্দোলন করতে না হয়। ইতিমধ্যেই আয়নাঘরের কারিগর অনেককে গ্রেফতার করেছেন। অচিরেই তাদের সন্ধান পাবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম বলেন ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ ও আনসারের গুম রহস্য উদঘাটন করে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আয়নাঘরের কারিগরদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আজ দীর্ঘদিন পর ইলিয়াস আলীর পরিবারের সাথে আমরাও আশায় বসেছিলাম। দেশে স্বৈরাচার মুক্ত হবে, আমাদের স্বজনদের ফিরে পাব। তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে গুম করাতো। আমরা বিশ্বাস করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।
গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের ভগ্নিপতি শামীম আহমদ বলেন এক যুগ ধরে আমরা কি মনোকষ্টে রয়েছি তা কাউকে বুঝাতে পারবোনা। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই, আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার মধ্যে দিয়ে।
নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদের ভাই হাসান মঈনুদ্দিন আহমদ মঈনুল বলেন, ঢাকার উত্তরা থেকে ১২ বছর পূর্বে আমার ভাই জুনেদ আহমদ ও দিনার গুম হন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আমরা স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমরা স্বস্তি ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমাদের গুম হওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে দিন।
গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের দিনারের ভাগ্না ঈশান আহমেদ বলেন, আমার মামা একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতা ছিলেন। গত ১২ বছর থেকে আমরা আমাদের বড় মামা ইফতেখার আহমদ দিনার, এম. ইলিয়াস আলী, আনসার আলী সহ আমাদের স্বজনদের খোঁজে পাচ্ছি না। আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পেতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বোন তাহসিন শারমিন তামান্না বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস হলেও আমাদের পরিবারের জন্য সারা বছই গুম দিবস। টিভিতে কোন পোগ্রাম দেখলেই আমার ভাইয়ের কথা স্মরণ হয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কেন আমার ভাইকে গুম করা হলো। যখন কোন নিছিল দেখি, তখন মনে হয় মিছিলের অগ্রভাগে আমার ভাই রয়েছে্ ১২ বছর থেকে আমার ভাইকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমি রাস্তায় রয়েছি।
যারা গুম থেকে ফিরে এসেছেন, তারা কি অমানবিক নির্যাতনে ছিলেন। হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে সারাদেশে আমার যত ভাইকে গুম-খুন করেছে, সব কিছুর হিসাব দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আমরা স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আশা করেছিলাম। আমরা আর কত অপেক্ষা করব। আমার বাবা ছেলের শোকে সজ্জাসায়ী, প্রতিমাসে তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। আমার বাবা ও মায়ের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। আমরা আর কোন মানববন্ধন চাইনা, আমরা রাস্তায় দাঁড়াতে চাইনা। আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পেতে চাই, আর কিচ্ছু চাই না।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদি, পেশাজীবি নেতা অধ্যাপক ডা: নিয়াজ আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইসতিয়াক সিদ্দিকী, এডভোকেট হাসান পাটোয়ারী রিপন, সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক আব্দুল ওয়াহিদ সোহেল, সিলেট জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, জেলা জাসাসের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মাসুম রাজ্জাক রুমেল, বিএনপি নেতা জাকারিয়া আরপিন ফয়সল, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী, যুবদল নেতা এমদাদুল হক স্বপন, কয়েস আহমদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা শফি আহমদ খান, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুতাকাব্বির চৌধুরী সাকি, যুগ্ম সম্পাদক তাজুল ইসলাম সাজু, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান রানা, বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক হুসাইন আহমদ প্রবেল প্রমুখ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা নুরুল হক।
মানববন্ধনে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সমুহের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবি ও গুম পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা