দূর্গেশ সরকার বাপ্পী,গোয়াইনঘাট :: অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে এক মাসের মধ্যেই তিন দফায় বন্যা । বন্যার পানি কমতে শুরু কলেই ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। বাড়বছে জনসাধারণের চলাচলের দূভোগ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ জানান বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট,কৃষি,মৎস্য,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রাণীসম্পদ ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।সবমিলিয়ে তিন বারের বন্যায় উপজেলার ২ শত ২৪ কোটি ৫৪ লক্ষ ২৮ হাজার দুইশত টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাঘাটে ক্ষতি পরিমান বেশি হয়েছে। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)পাহাড়ি ঢলের স্রোতে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে রাস্তা ও প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তার পানিতে তলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানি নামায় বন্যার ভয়াবহতার ক্ষত চিহ্ন নিয়ে বেরিয়ে আসছে এসব রাস্তা।বন্যার পানির স্রোতে এগুলোর বিভিন্ন অংশের পিচ ও পাথর সরে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের এ অবস্থায় রাস্তায় চলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের।
সিএনজি (অটোরিকশা) ড্রাইভার গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও সেলিম বলেন , গোয়াইনঘাটে বার বার বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে পানির স্রোতে সড়কের বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে।বিশেষ করে হাদারপার টু সালুটিকর সড়কের সাকের পেকেরখাল,দামারী এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ।জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঠেলা ধাক্কা দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানায় তারা।হাদারপার থেকে সিলেট শহরে যাওয়া সিএনজি যাত্রীরা জানান, বন্যায় রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়েও চলাচল করতে হচ্ছে তাছাড়া গাড়ি ভাড়া দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত।ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটি দ্রত সংস্কার করে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানায় তারা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশল( এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বন্যায় তাদের অধীনে থাকা উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক এবং গ্রামীণসহ সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ প্রায় দুইশত কিলোমিটার।
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উপজেলা ও ইউনিয়ন ইউনিয়ন সড়কগুলো হচ্ছে গোয়াইনঘাট রাধানগর জিসি – জাফলং সড়ক,সালুটিকর বাজার-গোয়াইনঘাট জিসি সড়ক,খাইরাই উপরগ্রাম- হাদারপার, গোয়াইনঘাট জিসি- নন্দীরগাঁও ইউপি সালুটিকর বাজার সড়ক, আরএইচডি ভায়া জলুরমূখ বাজার সড়ক, পিরিজপুর- পশ্চিম জাফলং ইউপি অফিস সোনারহাট মনরতল বাজার, হাতিরপাড়া মানিকগঞ্জ -ফতেপুর ভায়া ডৌবাড়ী এবং লেংগুড়া ইউপি অফিস, আর এন্ড এইচ তামাবিল লাফনাউট আলীরগাঁও ইউ পি অফিস সড়ক , গুরোকচি বাজার ফানাইকোনা পশ্চিম জাফলং ইউপি অফিস সড়ক, নন্দীরগাঁও ইউপি অফিস আঙ্গারজুর মসজিদ বাজার সড়ক, আটলিহাই, আঙ্গারজুর মাদ্রাসা পিয়াইনগুল উচ্চ বিদ্যালয় আরএইচডি সড়ক,লামা সাতাইন কুরের বাজার,লাকি উত্তর,মোহাম্মদপুর কালিনগর নলজুরী সড়ক,সালুটিকর কোম্পানিগঞ্জ মিত্রিমহল সড়ক,গুরোকচি সিটিংবাড়ি পশ্চিম পেকেরখাল সড়ক,রাধানগর বাজার ছোটখেল সড়ক,সারী গোয়াইন বারহাল বাজার হাজরাই, নন্দীর গাঁও মানাউরা, গোয়াইনঘাট সালুটিকর আরডি বিরকুলী মসজিদ, নয়ামাটি লাটি পশ্চিম, জাফলং বাজার বাসস্ট্যান্ডে ছৈলাখেল জিপিএস সড়ক,সালুটিকর বাজার রানিগঞ্জ সড়ক,লাবু জিপিএস হায়দর সড়ক,বারকিপুর মসজিদ উওর রাউথগ্রাম সড়ক,মনতলা বাজার শিমুল বিল সড়ক,জাঙ্গাইল ফুকরাইল কুরী সড়ক,পাইকরাইজ সড়ক,কান্দিগ্রাম চিরুরপার সড়ক,আহারকান্দী পুর্নগ্রাম সড়ক,জাংগাইল জিপিএস বিরকুলী মসজিদ সড়ক, হাতির পারা মানিকগঞ্জ সড়ক, মনরতল বাজার রাজনগর গ্রামীণ সড়ক, রামনগর রাতারগুল সড়ক,আরএইচডি মিত্রিমহল জিপিএস সড়ক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সালুটিকর থেকে গোয়াইনঘাট সড়কে সাকের পেকের খাল এলাকায় প্রায় ২০০ ফুট অংশ বন্যার পানির স্রোতে ভেঙ্গেচুরে গেছে ।
এই জায়গায় গাড়ি ঠেলা ধাক্কা দিয়ে যানচলাচল করছেন।অন্যদিকে বঙ্গবীর থেকে গুরোকচি সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ও পাথর সরে গেছে। এতে তৈরি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। পিরিজপুর টু আহারকান্দি সোনার হাট সড়কের অবস্থাএকই রকম। নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ রাস্তা এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,বাইশ সালের বন্যায় এই উপজেলার রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।গত ২৩ সালের অর্থ বছরে কিছুটা মেরামত করেছি ও বাকিটা প্রস্তুতি চলছিল।ইতিমধ্যে ২৪ সালের উপর্যুপরি ৩ বারের বন্যায় রাস্তাঘাট লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাকা কাঁচা মিলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে উপযোগী করে তলতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লাগবে। অনেক গ্রামীণ সড়কে এখনো পানি।যেসব সড়কে পানি নেমেছে সেগুলো থেকে বন্যার ক্ষত বেরিয়ে আসছে। আমরা সরেজমিন ঘুরে বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করছি।এগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হয়েছে । তিনি আরোও জানান,ইতিমধ্যে প্রধান প্রকৌশলী মহোদয় গোয়াইনঘাট উপজেলা ভিজিট করে গেছেন ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন অর্থ বছরেই কাজ শুরু করবেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন