নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের হাওর নদী থাকে পানিতে টুইটুম্বুর। তাই এই বর্ষা মৌসুমে হাওরাঞ্চলে যাতায়াতের প্রদান বাহন নৌকা। প্রতি বছরই বৈশাখের শুরু থেকে নৌকার হাট বসে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর বাজারে। সিলেট সদর উপজেলা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট উপজেলার মিলনস্থলে এই বাজারের অবস্থান। তাই ক্রেতা ও বিক্রেতা বেশিরভাগই এই তিন উপজেলার মানুষজনই থাকেন। বৈটাখাল, নিয়াইন, লেঙ্গুয়া ও গোয়াইনঘাট এলাকার বিক্রেতারা বেশি নৌকা নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। তবে ক্রেতার ক্ষেত্রে এই উপজেলাগুলো ছাড়াও হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখান থেকে এসে নৌকা কিনে নিয়ে যান। আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে এই নৌকার হাট। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর বাজার থেকে কাঠের নৌকার হাট এর ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করছেন আমাদের আলোকচিত্রী মো: শাহীন আহমদ।
শতাধিক বছর থেকে চলে আশা এই নৌকার হাটে বিক্রি হয় নতুন ও পুরাতন নৌকা। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সালুটিকর বাজারে চেঙ্গেরখাল নদীর সাথে সংযুক্ত চরকখালে নৌকা বিকিকিনি হয় এই হাটে। পানি বেশি থাকলে এই খালে নৌকার হাট বসে আর পানি কম থাকলে সড়ক থেকে একটু ভিতরে লামার বাজার দামারি বিলে হাট বসে।
নৌকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, ১২ ফুট প্রস্থ ও আড়াই ফুট লম্বা প্রতিটি নতুন নৌকা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকায়। পুরাতন নৌকা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকায়। দূর দুরান্ত থেকে বিক্রির জন্য নৌকা নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। নৌকা কিনে কেউ পানি পথে আবার কেউ ট্রাক কিংবা হিউমেন হোলার করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদেরে এলাকায়।
শনিবার ১৩ জুলাই) সরজমিনে দেখা যায়, সালুটিকর বাজারে চেঙ্গেরখাল নদীর সাথে সংযুক্ত চরকখালে সাড়িবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে শ’খানেক নতুন ও পারাতন নৌকা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতা বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে নৌকার হাট। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নৌকা নিয়ে আসতে থাকনে বিক্রেতারা। অনেকেই দুই তিনটি নৌকা একসাথে বেধে আবার অনেকেই একটির উপর আরেকটি নৌকা নিয়ে হাটে আসছেন। নৌকা খালে বেঁধে রেখে পাশেই সড়কে ছাতা নিয়ে বসে রয়েছেন বিক্রেতারা। দাঁড়িয়ে দরদাম করছেন ক্রেতারাও। সড়কের অপর পাশে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা নৌকার বৈটা। এই হাটে মৌখিক ভাবে নৌকা কেনা যায় না। বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে এই হাটের আজারাদারের মাধ্যমে রশিদ নিয়ে নৌকা কিনতে হয়।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩ জন আলং (নৌকার মিস্ত্রী) ও ২ জন সহযোগী (যুগালি) মিলে এক দিনে একটি নৌকা তৈরি করতে পারেন। তবে অদক্ষ মিস্ত্রী দিয়ে নৌকা বানাতে গেলে ৫ থেকে ৬ দিন সময় লেগে যায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নয়া গ্রামের নৌকা বিক্রেতা ইসমাই হোসেন. তিনি বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম তাই বিকিকিনি ভালো। আমি ২টি নৌকা নিয়ে এসেছিলাম। ১টি নৌকা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আর একটি নৌকা আশা করি ঘন্টাখানেকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।
ছাতক থেকে বিক্রেতা আমির হোসেন নিয়ে এসেছেন ২টি নতুন নৌকা। তার নৌকার সামনে ক্রেতাদের ভিড়। ক্রেতাদের সাথে দরদাম করা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পাড় করছেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, পানি বাড়ার সাথে সাথে আমরার নৌকা বিক্রিও বাড়ে। কারণ বর্ষার সময় এই আশপাশের হাওড় এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
৫হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরতন নৌকা কিনেন গোয়াইনঘাটে রহমত আলী। তিনি বলেন, দেইক্কা কিনলে পুরান নৌকা নতুনের চেয়ে বেশি দিন টিকে। তাই আমি পুরান নৌকা কিনছি। তিনি আরো বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। কিন্তু বর্ষার সময়তো কৃষি কাজ করা যায় না। এর লাগি মাছ ধরি। গত দুই বছর যাবত অন্যের নৌকা দিয়া মাছ ধরছি। তাই ইবার নিজেই নৌকা কিন্না নিলাম।
নৌকার হাটের ইজারাদার (আশিল) নূর মিয়া বলেন, এখানে প্রতি শনি-মঙ্গলবার নৌকারি হাট বসে। খালে পানি বেশি থাকলে চরখখালে নৌকার হাট বসে । এখানে বিক্রেতাদের কোনো টাকা দিতে হয় না। যারা নৌকা কিনেন তারা টাকা দিয়ে রশিদের মাধ্যমে নৌকা কিনেন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা