নিজস্ব সংবাদদাতা, মাধবপুর
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার- প্রচারণা এখন তুঙ্গে। চলছে বিরামহীন মাইকিং। নির্বাচনী লড়াইও জমে উঠেছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রচার প্রচারণা। সেই সঙ্গে সুকৌশলে একে অন্যের দোষত্রুটি তুলে ধরছেন ভোটারদের সামনে। আগামী ৫ জুন মাধবপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণের দিন।
মোট ভোটার ২, ৭৩, ১৯২, পুরুষ ভোটার ১, ৩৯, ৩৩৪, মহিলা ভোটার ১, ৩৩, ৮৫৭, মাধবপুর উপজেলা ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আয়তন ২৯৫বর্গ কিলোমিটার। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধী হয়েছেন তিনজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন।
তবে ভোটারদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে। মাধবপুর উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থী লড়াই করছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারমান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা হবিগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনের সমর্থনে প্রার্থী সৈয়দ হাবিব উল্লাহ সূচন। এর মধ্যে জাকির হোসেন আনারস এবং হাবিব উল্লাহ শালিক পাখি প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হতে মরিয়া বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী জেলা বিএনপি সাবেক সহ সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান। বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে মাঠে ঐক্যবদ্ধ এবং সরব।
ফলে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। জেলা বিএনপির (বহিষ্কৃত) সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ শাহজাহান ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের হাটবাজার ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীসহ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধী ১০ প্রার্থীকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও উপজেলার আনাচে-কানাচে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ভাষ্য, মাধবপুর একসময় দলটির শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গৃহবিবাদে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিসহ সহযোগী সংগঠনের কমিটি হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর খেসারত দিতে হয়েছে দলটিকে। বিভক্তি থাকায় লাখো ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের কাছে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থী সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব উল্লাহ সূচনের পক্ষে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন ব্যারিস্টার সুমনের কর্মী-সমর্থকরা। এতে বেকায়দায় পড়তে পারেন সূচনের চেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী অসীম চৌধুরী। তবে নির্বাচনে অসীম চৌধুরী এবং সৈয়দ শাহজাহানের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। দু’জনই বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ছিলেন। তারা উভয়ই জনগনের কাছে পরীক্ষিত সৈয়দ শাহজাহান গত ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে অসীম চৌধুরী এর আগে ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হলে জয়ের ফসল উঠবে বিএনপি প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সৈয়দ শাহজাহানের ঘরে। সৈয়দ শাহজাহানের পক্ষে তাঁর ভাই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সায়হাম গ্রুপের কর্ণধার সৈয়দ মো. ফয়সল, গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ হুমায়ুন, শিল্পপতি সৈয়দ সেলিম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এবং সৈয়দ সাফকাত আহমেদসহ তাদের পরিবারের সদসরা দিনরাত গণসংযোগ ও সভা করে ভোট চাইছেন।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে সৈয়দ ফজলে আকবর মো. শাহজাহান (নির্বাচনী পোস্টারে নাম এসএফএএম শাহজাহান) বলেন, এটা দলীয় নির্বাচন নয়, তবুও কেউ কেউ ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। যার ভোট তিনিই দেবেন, সেই পরিবেশ বজায় থাকুক। গৃহবিবাদ সম্পর্কে জাকির হোসেন বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সব নেতাকর্মী আনারস প্রতীককে বিজয়ী করতে এক মোহনায় মিলিত হয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মাধবপুর পৌর বিএনপি সভাপতি(বহিষ্কৃত) আব্দুল আজিজ (চশমা), মাধবপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মাধবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এরশাদ আলী(বই).জগদীশপুর জেসি স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ সামসুল আরেফিন রাজীব (তালা), আসাদুজ্জামান গেন্দু (টিয়াপাখি), মুফতি সুলাইমান গাজী (টিউবওয়েল), চা শ্রমিক নেতা বাবু দিরা নায়েক ধীরু(মাইক)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা বেগম শেলী (ফুটবল), বিএনপি মহিলা দলের সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক(বহিষ্কৃত) সেলিনা আক্তার (কলস), জেলা মহিলা আওয়ামীলগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা তুজ জোহরা রিনা (পদ্মফুল), আসমা আক্তার চৌধুরী (সেলাই মেশিন)। ২০১৪ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান ৭২ হাজার ৯২৫ ভোট, জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ৩৬ হাজার ৪১৪ ভোট। সৈয়দ হাবিবউল্লাহ সুচন ৪ হাজার ৩৯ ভোট। ২০১৯ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান ৫৬ হাজার ৭৫০ ভোট, এহতেশামুল বার চৌধুরী লিপু ২৬ হাজার ৮৬৯ ভোট, আতিকুর রহমান আতিক ২৩ হাজার ৪৯১ভোট। এবারের নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট চেয়ারম্যান প্রার্থী দিকেই নজর ভোটারদের। সাধারন ভোটারদেও মন্তব্য এবারের লড়াই হবে ঘোড়া আর আনারসেই। ভোটাররা সহজে মুখ খুলতে চায় না।
মাধবপুর থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠ ও নিরেপক্ষ করতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুুত। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা