যুগভেরী ডেস্ক ::: দুর্গত মানুষকে উদ্ধারে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। আগুন কিংবা পানি, যে কোনো দুর্যোগে অগ্র সৈনিক হিসেবে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু এক রাতের প্রবল বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ডুবতে শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের তালতলা প্রধান স্টেশনটি। এছাড়াও নগরে সুরমার তীরবর্তী বিভিন্ন আবাসিক এলাকায়ও পানি উঠতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পানি উঠতে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের সিলেটের প্রধান স্টেশনে। ইতোমধ্যে বন্যার পানি ফায়ার সার্ভিসের ব্যারাকেও উঠে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘বন্যার পানি ওঠার কারণে এ স্টেশন থেকে মেশিনারিজ ২৭ নং ওয়ার্ডের আলমপুর স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে। পানি আরও বাড়লে গাড়িগুলোসহ অন্যত্র নিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কর্মীদের আপাতত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ফায়ার সার্ভিসের মূল স্টেশন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তালতলা স্টেশনটির পেছন দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈঠাখাল ছড়াটি সরাসরি সুরমা নদীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি বাড়ায় ফায়ার স্টেশনে পানি ওঠে। সুরমার পানি কমলে পানি নেমে যাবে, আর পানি বাড়লে ফায়ার সার্ভিস ব্যারাকসহ তালতলা এলাকা ডুবে যায়। এ অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের যন্ত্রপাতি ও আবাসন স্থানান্তর ছাড়া বিকল্প উপায় নেই। তিনি বলেন, তালতলা ফায়ার স্টেশন ছাড়াও নগরের বাগবাড়ি, উপশহর এলাকার নিম্নাঞ্চলের পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও, সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষ করে উজানে ভারত থেকে নেমে আসা এক রাতের পাহাড়ি নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ। এসব উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টি প্লাবিত হয়ে সাড়ে ৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য উপজেলাগুলোতে ২১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার দুর্গত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ প্যাকেট করে শুকনা খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সর্বদা প্রস্তুত।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন