এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ : ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ২৭ মে, সোমবার, ২০২৪ ০১:৩৯:৪৬
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ : ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক

কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠ হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে প্রচারনা নিয়ে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে অটোরিক্সা সিএনজি গাড়ীর বহর নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের মোটরসাইকেলের সমর্থনে শ্রমিক নেতা জুনেদ হাসান জীবান সহ ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী কানাইঘাট বাজারে শোডাউন দেন। একপর্যায়ে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ডালাইচর গ্রামের ইয়াহিয়া নামে এক ব্যক্তি হাটের দিন বাজারে যানজট সৃষ্টি করে কেন মিছিল করা হচ্ছে কথা বললে মোটর সাইকেলের সমর্থকদের সাথে তার কথা কাটাকাটি এবং উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ডালাইচর গ্রামের বেশ কিছু লোকজন পূর্ব বাজারে ডাকবাংলোর পাশে অবস্থান নেন।
অপরদিকে মোটর সাইকেলের গাড়ী মিছিলের মাইকে হামলা ও মারধরের অভিযোগ এনে ছাত্রলীগের একাংশ ও মোটরসাইকেলের সমর্থকরা বাজারে দফায় দফায় মোটর সাইকেলের সমর্থনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল বের করে। এ সময় পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কানাইঘাট বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু তারপরও উত্তেজনা থামেনি। মোটর সাইকেলের সমর্থকরা লাঠি-সোটা নিয়ে কানাইঘাট দক্ষিণ বাজারে ও ডালাইচর গ্রামের বেশ কিছু লোকজন পূর্ব বাজারে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে ডালাইচরের কিছু লোকজন লাঠি-সোটা, ইট-পাটকেল নিয়ে দক্ষিণ বাজারের দিকে মোটরসাইকেলের সমর্থকদের উপর হামলার জন্য তেড়ে যান। পাল্টা মোটরসাইকেলের সমর্থকরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ধাওয়া দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে বাজারে আসা লোকজন সহ দু’পক্ষের কয়েকজন ইট-পাটকেল ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। মিছিলকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ ধারালো অস্ত্র, রড, রুইল, লাঠি-সোটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
আতঙ্কে অনেক ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে দেন। বাজারে কেনাকাটা করতে এসে লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। বাজারে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে দুই পক্ষ বাজার থেকে চলে যায়। তবে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সঘংর্ষের ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের মোটর সাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের অভিযোগ ডালাইচর গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক। সে সহ আরো কয়েকজন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রচার মিছিলের মাইকে হামলা ও কয়েকজন সমর্থককে মারধর করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
অপরদিকে ডালাইচর গ্রামের কিছু লোকজন জানান, হাটের দিনে সিএনজি গাড়ীর শোডাউন দিয়ে বাজারে যানজট সৃষ্টি না করার জন্য তাদের গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া অনুরোধ করলে তার উপর মোটরসাইকেলের সমর্থকরা হামলা চালিয়ে মারধর করে বাজারে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পরে ডালাইচরের কিছু লোকজন এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে মোটরসাইকেলের সমর্থকরা তাদের উপর হামলা করে।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সংঘর্ষের সময় কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি অলক কান্তি শর্ম্মার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাজারে অবস্থান করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশের গাড়ীতে ঢিল নিক্ষেপের ঘটনায় পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের সমছুল হকের পুত্র বাবুল আহমদ নামে একজনকে আটক করে ১৫১ ধারায় আদালতে সোপর্দ করেছে থানা পুলিশ।
নির্বাচনের শেষ সময়ে কানাইঘাট বাজারে লাঠি-সোটা নিয়ে মিছিল করায় ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন ভোটাররা।
নির্বাচন নিয়ে কানাইঘাট বাজারে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় নির্বাচন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার ফারজানা নাসরিন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে যে কোন ধরনের পদক্ষেপ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন