যুগভেরী রিপোর্ট
একটি সড়কবাতিও জ্বলছে না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারপাশ। হাত পাতলে হাত দেখা যায় না। পথচলতি ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর মোটরসাইকেলের আলোয় পথ চলছেন পথচারীরা। সিলেট নগরের রায়নগর রাজবাড়ি এলাকায় ১৬ আগস্ট মধ্যরাতের চিত্র ছিল এমনই।
রায়নগর রাজবাড়ি এলাকার মতো নগরের অর্ধশতাধিক এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় সড়কবাতি নষ্ট থাকায় সন্ধ্যার পর থেকে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। ১৬ ও ১৭ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
রায়নগর রাজবাড়ি এলাকার দুজন বাসিন্দা জানান, সড়কবাতি না জ্বলায় সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সড়কের উভয় পাশের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের সাইনবোর্ডের আলোতে তাঁদের পথ চলতে হয়। এ অবস্থায় বাসিন্দাদের বিশেষ করে নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সন্ধ্যার পর পথ চলতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের উপশহর, পূর্ব শাহি ঈদগাহ, মেজরটিলা, ঝরনারপাড়, কুমারপাড়া ও লামাপাড়া এলাকার অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি একেবারেই জ্বলছে না। এসব এলাকা ছিল পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন। এর বাইরে সাগরদিঘিরপাড়, লামাবাজার, কদমতলী, হাওলদারপাড়া, করেরপাড়াসহ কিছু এলাকায় সড়কবাতি জ্বললেও কয়েকটি খুঁটি পরপর বাতি অকেজো থাকায় আধো আলো আধো অন্ধকার পরিবেশ ছিল। কিছু এলাকায় সড়কবাতি থাকলেও পর্যাপ্ত ছিল না।
ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, নগরের অনেক এলাকায় কোথাও সড়কবাতি জ্বলছে, আবার কোথাও সড়কবাতি নেই। আলো-আঁধারির এ পরিবেশের কারণে সন্ধ্যার পর পথ চলতে অসুবিধা হয়। ছিনতাইয়ের শঙ্কায় থাকতে হয়। এ ছাড়া অন্ধকারে হাঁটার সময় একটু অসাবধান হলেই হোঁচট খেয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। কিছু কিছু জায়গায় অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে মাদকাসক্তরা অপতৎপরতা চালায়।
উপশহর এলাকার কয়েকটি ব¬কের অন্তত ১২টি সড়ক সন্ধ্যার পর থেকে সড়কবাতির অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে বলে অভিযোগ করেছেন ডি ব¬কের ২১ নম্বর রোডের বাসিন্দা আফজাল আহমদ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘উপশহর এলাকাটি নগরে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। অথচ এলাকাটির অসংখ্য সড়কে দিনের পর দিন কোনো সড়কবাতি জ্বলছে না। জরুরি প্রয়োজনে রাতে বাইরে যেতে হলে আতঙ্কে থাকতে হয়।’
নগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশনে আগে ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকটি মৌজা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করে আরও ১৫টি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়। পুরোনো ও বর্ধিত ওয়ার্ড মিলে ৪২টি ওয়ার্ডে গত ২১ জুন সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সিটি করপোরেশনকে সম্প্রসারণ করা হলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়নকাজ শুরু করতে পারেনি সিটি কর্তৃপক্ষ। ফলে সেসব ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত কোনো সড়কবাতি স্থাপন করা হয়নি।
সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ শাখা জানিয়েছে, নগরের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে সড়কবাতির চাহিদা প্রায় ৩৫ হাজার। বিপরীতে বাতি আছে ২৬ হাজার। তবে অতিরিক্ত গরম ও বজ্রপাতে প্রায়ই সড়কবাতি অকেজো হয়ে পড়ে। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি অকেজো সড়কবাতি বদলাতে হয়। নগরের রাস্তায় যেসব সড়কবাতি আছে, এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার এলইডি বাতি, প্রায় ১২ হাজার টিউবলাইট এবং বাকিগুলো এনার্জি বাল্ব।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক) মো. রুহুল আলম বলেন, নতুন করে কোথাও সড়কবাতি স্থাপন করা হচ্ছে না। বাতি নষ্ট হয়ে গেলে তা দ্রুততম সময়ে বদলানো হয়। নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডে দ্রুত সড়কবাতি লাগানো হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন