যুগভেরী রিপোর্ট
বিকেল তিনটা। মাথার উপরে রোদের তেজ প্রকট। কেউ ঘামে ভিজে ছায়ার বিশ্রাম নিচ্ছেন কেউ কেউ হাতে পাখা নিয়ে বাতাস করছেন শরীরে। এরমধ্যে চারজন বেশ মনযোগী হয়ে মোবাইলে চোখ রাখছেন। কাছে যেতেই বুঝা গেল তারা সাপলুডু খেলছেন। আরও দুইজন খেলা দেখছেন খুব কৌতুহলে। খেলা থাকা একজন জিজ্ঞেস করলেন, কিছু নিবেন? না নিলে খেলা দেখেন!
মঙ্গলবার এইদৃশ্য দেখা গেলো সিলেট নগরীর লালদীঘিরপাড় হকার মার্কেটে গিয়ে। যেখানে প্রায় তিন হাজার হকার পুনর্বাসন হয়েছেন গত ১০ মার্চ। কিন্তু বেচাকেনা না থাকায় এভাবেই অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
কাপড়ব্যবসায়ী সাগর আহমদ বলেন, বেচাকেনা নাই কি করবো। সময় তো পার করতে হবে। আগে জিন্দাবাজার থাকতে প্রতিদিন ১২-১৪ হাজার টাকা বিক্র করতাম কিন্তু এখন আজ সকাল থেকে এখন সাড়ে তিনটা মাত্র ৪-৫শত টাকা বিক্রি হয়েছে। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
রুবেল আহমদ নামের আরেক কাপড়ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের এখানে মানুষ একেবারেই আসে না। হঠাৎ একদুইজন এলেও কেনাদামের অর্ধেক বলে চলে যায়। অনেক সময় বাধ্য হয়ে আমরা লোকসানেও বেচতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন লাগোয়া মাঠের একটি বিশাল অংশ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী হকার মার্কেট। এক সারিতে কাঁচাবাজার, অন্য সারিতে মাছ, শুঁটকি, পেঁয়াজ ও কাপড় নিয়ে বসে রয়েছেন হকাররা। তবে কাঁচাবাজার কিছুটা জমে উঠেছে। ক্রেতারাও আসছেন। কিন্তু কাপড়ব্যবসায়ীদের গলিতে ক্রেতাদের চোখ যেন পড়ছেই না।
এ ব্যাপারে হকার্স ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোঃ রকিব আলী বলেন, কাঁচাবাজার যেমন মাছ মাংসসহ বেশ কিছু দোকানে ক্রেতারা নিয়মিত আসছেন কিন্তু কাপড়ের দোকানে ক্রেতা খুবই কম। মানুষজন যাতে সবসময় এখানে আসেন এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষের আর জোড়ালো কাজ করতে হবে।
জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র আনোয়ারুজ্জামান সিলেটকে ক্লিন ও স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে হকার পুনর্বাসনের ঘোষনা দেন। এ নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে লালদিঘীপাড় মাঠকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলে সেখানেই সিলেট নগরের হকারদের পুনর্বাসন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য তিনি হকারদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। হকাররাও মেয়রকে সড়কে না বসে মাঠে ব্যবসা করার কথা দেন।
গত ১০ মার্চ হকারদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে লালদিঘীপাড় এলাকায় হকারদের অস্থায়ী মার্কেট। বাজারটি প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে চার একর মাঠে মাটি ভরাট, ইটের সলিং, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা করে দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
২০২১ সালে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওই বছরের জানুয়ারিতে নগরভবন-লাগোয়া লালদিঘীর পাড়ের খোলা মাঠে হকারদের জন্য অস্থায়ী ভাবে পুনবার্সনের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বেশি দিন সেখানে থাকে নি। তার কারণ ছিল তাদের লাইটিং সমস্যা, রাস্তার সমস্যা ছিল প্রধান করাণ।
প্রাথমিক অবস্থায় ২০২১ সালে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয়। তবে দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেস্তে যায় হকার পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা