এশিয়ার প্রাচীনতম বাংলা সংবাদপত্র প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

প্রিন্ট রেজি নং- চ ৩২

২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বৃষ্টির ছোঁয়ায় চা-বাগানগুলোতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ১৩ মে, সোমবার, ২০২৪ ০৪:১১:৩০
বৃষ্টির ছোঁয়ায় চা-বাগানগুলোতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার ::
বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ায় সজীবতা ফিরে পেয়েছে চা-বাগান। বর্তমানে নতুন করে পাতা গজাতে শুরু করেছে। এর আগে প্রচন্ড তাপাদাহের কবলে পরে চা গাছ। কোথাও কোথাও জ্বলে পুঁড়ে যায় গাছ। আবার কোথাও ধরে লাল রোগ। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই মৌলভীবাজারের ৯২ টি চা বাগানে নেমে যায় উৎপাদনের গতি। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতের ফলে এই সমস্যা এখন আর নেই। সবুজের সমারোহে ভরে গেছে পুরো বাগান এলাকা।
প্রায় ৪ মাস আগ থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোতে চা গাছ ছাটাই করার কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। চা গাছ ছাটাই করার ফলে চা বাগানে চলে আসছিল রুক্ষ শুষ্ক ভাব। প্রচন্ড দাবাদাহের কবলে পরে চা গাছ। চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়ার্স তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রী পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর মধ্যে ৩৬ ডিগ্রীর উপরে পরে চা গাছ। এতে ক্ষতির মূখে পড়ে এ শিল্প। চা গাছের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে দেওয়া হচ্ছিল কৃত্রিম পানি। এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির কারণে ছাটাই করা চা গাছে এসেছে নতুন পাতা। বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে চা-গাছ। বৃষ্টির ছোঁয়ায় নব প্রাণ ফিরে পেয়েছে চা গাছগুলো। এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানের জন্য অনেক উপকারি বলে জানিয়েছেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা। শ্রীমঙ্গলে গত ২১ ঘন্টায় ১৪৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান।
সরেজমিনে ভাড়াউড়া, জেরিন, ফুলছড়া, কালিঘাটসহ বিভিন্ন চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছের পর গাছে সবুজের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়। পাতায় ভরে গেছে গাছগুলো। নতুন করে চায়ের কুঁড়ি গজানোয় খুশি চা-বাগানের শ্রমিকেরা। বেশ কয়েকটি বাগানের চা-গাছ থেকে সমানে তোলা হচ্ছে পাতা।
ইস্পাহানী জেরিন চা বাগানের উপ মহাব্যবস্থাপক সেলিম রেজা বলেন, বছরের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চা-পাতা উৎপাদন অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। খরা প্রথম দিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে স্বস্তি ফিরেছে। মাটির আর্দ্রতা বাড়ায় সারও দেওয়া যাচ্ছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বাড়তে শুরু করেছে চা-গাছ। এতে ফলন যেমন বাড়বে, তেমনি অর্জিতও হবে চা-উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। বৃষ্টির অভাবে তীব্র খরার কবলে পড়ে চা গাছগুলো ঝলসে পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছিল। এমন সময় বৃষ্টি চা উৎপাদক মহলে এনে দিয়েছে স্বস্তি। এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানের জন্য অনেক উপকারি বলে জানিয়েছেন শ্রী গবিন্দপুর চা বাগানের মালিক মো. মহসীন মিয়া।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান ও ফিনলে চা ভাড়াউড়া ডিভিশনের জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও অধিক তাপমাত্রার কারণে বাগানে নতুন পাতা না আসায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। নতুন কুঁড়ি না আসা, পানির সংকট, লাল মাকড়সার আক্রমণ প্রায় সব চা বাগানেই ছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে। এখন চা গাছে দ্রুত নতুন কুঁড়ি আসবে, প্লাকিং শুরু হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষভাবে নতুন চা গাছ যেগুলো আছে তার জন্য বেশি উপকারী। তারপর প্রুনিংকৃত চা গাছগুলো দ্রুত কুঁড়ি ছাড়বে। অলরেডি চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টির জন্য দ্রুত চা-গাছের কুঁড়ি চলে আসবে। বাগান মালিকরা তাড়াতাড়ি চা পাতা চয়ন ও চা প্রক্রিয়াজাতকরণে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট এর পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও অধিক তাপমাত্রার কারণে বাগানে নতুন পাতা না আসায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। নতুন কুঁড়ি না আসা, পানির সংকট, লাল মাকড়সার আক্রমণ এখন প্রায় সব চা বাগানেই বিদ্যমান ছিল। তীব্র খরার কারণে চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন চা বাগানের ইরিগেশন (সেচ) দিয়েও চা গাছগুলোকে শতভাগ রক্ষা করতে পারছিলেন না। প্রচন্ড দাবদাহের পর টানা বৃষ্টি চা গাছগুলো তার আপন সজিবতা ফিরে পাচ্ছে। আশাবাদি এখন চা গাছে দ্রুত নতুন কুঁড়ি আসবে। প্লাকিং শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার ওপরে চা উৎপাদন হবে।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন