যুগভেরী ডেস্ক ::: সিলেটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়েছে। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই সিলেটে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব অনুষ্ঠান চলবে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে সিলেটে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। ১৪৩১ সালকে স্বাগত জানিয়ে বৈশাখের প্রথম দিন সকালে সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া পাঠশালা, চারণ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন আলাদাভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
রবীন্দ্রসংগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দলোক প্রতিবারের ন্যায় এবারো বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩১ আয়োজন করে। নগরীর কেওয়াপাড়াস্থ শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয় এবারের বর্ষবরণ উৎসব। যা উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানমালায় আনন্দলোকের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সংগীত, নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, গীতবিতান বাংলাদেশ, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, নৃত্যশৈলী, সুরাঞ্জলি, চারুবাক, সুর ও বাণী, ললিত মঞ্জরি, সিলেট আর্ট এন্ড কালচার, সঙ্গীত মুকুল, আনন্দ সংগীত নিকেতন ।
প্রতিবারের মতো এবারও শ্রুতি সিলেট রবিবার সকাল ৭ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত সুবিদবাজারস্থ ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজন করে বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩১ বাংলা। শতকন্ঠে বাংলা নববর্ষ কে বরণ করে নেয়া হয়। দিনব্যাপী আয়োজন মালায় ছিলো শতকন্ঠে বর্ষবরণ,মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন, মঙ্গলঢাক, একক ও সমবেত পরিবেশনা, নৃত্য,আবৃত্তি, সংগীত,রং তুলিতে বর্ষবরণ এবং বৈশাখী মেলা।
দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত পরিবেশনায় অংশগ্রহন করে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট, গীতবিতান বাংলাদেশ, দ্বৈতস্বর, নৃত্যশৈলী, ললিত মঞ্জরী, নৃত্যসুধা, সুরসপ্তক, সুরের ভূবন, নৃত্যাঞ্জলি, ছন্দনৃত্যালয়,সংগীত নিকেতন, মুক্তাক্ষর, নগরনাট, নৃত্যরথ, সংগীত মূকুল, দীপশিখা, অনির্বান শিল্পী সংগঠন, নাট্যম।
একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা হতে আগত অতিথি শিল্পী অরুন্ধতী অনুপ্রভা, বাউল সূর্যলাল দাশ, শামীম আহমেদ, গৌতম চক্রবর্তী,প্রদীপ মল্লিক,খোকন ফকির, ইকবাল শাই, লিংকন দাশ, পল্লবী দাশ মৌ, আশরাফুল ইসলাম অনি প্রমুখ।
সিলেট আর্টস কলেজের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় রং তুলিতে বর্ষবরণ, প্রদান করা হয় শ্রুতি সম্মাননা ১৪৩০ বাংলা। এবার শ্রুতি সম্মাননা পান লোক সংগীতে বাউল আবদুর রহমান।
নগরের ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ আয়োজনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংহঠন অংশ নেয়। এছাড়া শিশু-কিশোরদের নিয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার আয়োজন করে চারণ।
কবি নজরুল অডিটরিয়ামের মুক্তমঞ্চে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির এ উৎসব পালনে একটি অপশক্তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মঙ্গল শোভাযাত্রাকেও নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে সবকিছু মোকাবেলা করেছেন। এখন আর কোনো অপশক্তি বাংলার সার্বজনিন উৎসবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
এসময় তিনি আরও বলেন, বঙ্গন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন। নতুন বছরে এদেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে নস্যাৎ করে সেই অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কোনো অপশক্তিই উৎসবে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
আলোচনা পর্ব শেষে মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
নগরের চাদনীঘাট এলাকায় সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়েজন করেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট। এছাড়া সারদা হল প্রাঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। রোববার বিকেলে শুরু হওয়া আয়োজন চলবে পুরো সপ্তাহজুড়ে।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন