যুগভেরী ডেস্ক ::: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মো. জসিম মাদবর। পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক।
উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইংরেজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন তিনি। তবে কৃষক পরিবারের সন্তান জসিম মাদবরের কৃষির প্রতি রয়েছে প্রচণ্ড দুর্বলতা! চাকরির পাশাপাশি কৃষি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলে তার।
করোনাকালে ঘরবন্দি সময়কে কাজে লাগান তিনি। ইউটিউবে বরই চাষ দেখতে থাকেন।
পরে চুয়াডাঙ্গা গিয়ে প্রশিক্ষণও নেন বরই চাষের ওপর। প্রথমে কয়েকজন সহকর্মীদের সঙ্গে শুরু করেন বরই চাষ। এরপর জমি কিনে নিজেই বরই চাষে নামেন তিনি। দুই বছরের মধ্যেই তার বরই ক্ষেতে অভাবনীয় সাফল্য আসে। প্রচুর ফলন হয়। স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশি তার বরইয়ের। প্রবল আগ্রহ আর পরিশ্রম করার মানসিকতাই তাকে চাষাবাদে ভালো ফল এনে দিয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলার যাদুয়ারচর এলাকায় জসিম মাদবরের বরইয়ের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, এক আত্মীয়কে নিয়ে গাছ থেকে বরই ছিঁড়ছেন তিনি। বাজারে বিক্রি উপযোগী বরই সংগ্রহ করছেন ঘুরে ঘুরে। প্রায় প্রতিদিনই বিক্রি উপযোগী বরই সংগ্রহ করা যায় গাছ থেকে।
তিনি জানান, বাজারে থাকা অন্যান্য বরইয়ের চেয়ে তার বাগানের বরইয়েল স্বাদ ভালো, তাই চাহিদা বেশি। দোকানিরা অগ্রীম টাকা দিয়ে থাকেন বরই কিনতে। তাছাড়া খুচরা ক্রেতারাও তার কাছ থেকে বরই কিনে নেন। এমনকি প্রবাসে থাকা আত্মীয়-স্বজনের জন্যও অনেকে আসেন বরই কিনতে। সরাসরি বাগান থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যান বরই। ভালো ফলন এবং বাজারে চাহিদা থাকায় খুশি শখের এ কৃষক। চাষাবাদ নিয়ে আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। রয়েছে ভবিষ্যত পরিকল্পনাও।
আলাপচারিতায় তিনি জানান, বাড়ির কাছেই ৭১ শতাংশ কৃষি জমি কিনেছেন বরই চাষের জন্য। দুই বছর আগে প্রথম এককভাবে চাষাবাদ শুরু করেন। বাগানে চার শতাধিক বরই গাছ লাগান। বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী এবং আগাম টক নামের তিনটি জাতের বরই গাছ রয়েছে বাগানে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে আমার বাগানে প্রথম ভারত সুন্দরী গাছে ফলন আসে। বাজারে প্রথম দিকে আমি প্রতিকেজি ১০০ টাকা করে বিক্রি শুরু করি। এরপর ৮০ টাকা এবং এখন ৭০ টাকা করে বিক্রি করছি ‘ভারত সুন্দরী’ জাতের বরই। এখন ‘বল সুন্দরী’ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। বাজারে ‘বল সুন্দরী’ বরইয়ের দাম ৮০ টাকা কেজি। আমার চার শতাধিক গাছ থেকে এরই মধ্যে শত মণ বরই বিক্রি করেছি।
জসিম মাদবর আরও বলেন, জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে গাছে ফলন আসা পর্যন্ত আমার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বরই বিক্রি করে আমার আড়াই লাখ টাকার মতো রিটার্ন এসেছে। এখনো গাছে প্রচুর বরই আছে। প্রায় প্রতিদিনই বিক্রি করছি।
বরই মিষ্টি হওয়ার কারণ নিয়ে তিনি বলেন, যারা প্রফেশনাল চাষি, তারা হরমোন বা নানা ধরনের কেমিকেল ব্যবহার করেন, যাতে দ্রুত ফলন আসে। ফলন আসার পর জমিতে সেচ ব্যবস্থা রাখেন। এতে বরই বড় এবং রসালো হয় তবে মিষ্টভাব কম থাকে। এক্ষেত্রে আমার বরই সম্পূর্ণ আলাদা। সঠিক সময়ে ফলন আসা, কোনো রকম কেমিকেল ব্যবহার না করা এবং ফলন আসার পর আমি সেচ বন্ধ রাখি। এতে স্বাভাবিক নিয়মেই বরই বড় হতে থাকে। এ কারণেই বরই মিষ্টি হয়েছে। আমার বরই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে বড় হয়।
বেকার যুবকদের রবই চাষসহ যে কোনো চাষাবাদে আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জসিম মাদবর বলেন, কৃষিতে শ্রম দিলে কৃষি মানুষকে ঠকায় না। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আমাদের চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে। আমি এ বছর বরইয়ের চারাও দিয়েছি।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আপেল কুল, কাশ্মিরী কুলসহ নানা জাতের কুল বরই চাষ হচ্ছে। এখানে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই বরই চাষে ঝুঁকছেন।
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি : নূরুর রশীদ চৌধুরী, সম্পাদক : ফাহমীদা রশীদ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক : ফাহমীনা নাহাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অপূর্ব শর্মা