
আজ রোববার ভোট। গত শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা) পুনরায় নির্বাচিত হবেন, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল (ট্রাক) চমক দেখাবেন, তা জানা যাবে নতুন বছরের সপ্তম দিন ভোটগ্রহণ শেষে। ভোটারদের মুখে মুখে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা। উন্নয়ন আর প্রতিশ্রুতির হিসাব মেলাচ্ছেন ভোটাররা। বিগত দিনের উন্নয়ন আর নিত্য-নতুন প্রতিশ্রুতির হিসাব মেলাতে সচেতন ভোটাররা ব্যস্ত।
হাবিব ও দুলালের দ্বিমুখী লড়াইয়ে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগে কার ভোটের পাল্লা বেশি তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ওই আসনের দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট নৌকা ও ট্রাক প্রতীকে ভাগাভাগি হয়ে গেলে সাধারণ ভোটারদের ওপর নির্ভর করবে জয়-পরাজয়। শেষ হাসি হাবিব না দুলাল হাসবেন, তা নির্ধারণ করবেন ভোটাররা। সময়ে সময়ে পরিবর্তন হওয়া ভোটের মাঠে দুই প্রার্থীকে ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। হাবিব ও দুলালের কথার লড়াই হয়েছে সমানতালে। কেউ কাউকে কথায় ছাড় দেননি। আলোচনা-সমালোচনা তুলে ধরেছেন ভোটারদের কাছে। এখন ভোটাররা ৭ জানুয়ারি ওই আসনে পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন করবেন তা জানা যাবে ভোটের দিন।
তিনটি উপজেলা নিয়ে ওই আসনে ৭ জন প্রার্থী। প্রথমে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার ধারণা করেছিলেন ভোটাররা। আওয়ামী লীগের হাবিব, স্বতন্ত্র প্রার্থী দুলাল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের (লাঙ্গল) ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ভোটের মাঠে পরিবর্তন ঘটে। প্রতীক পাওয়ার পর হাবিব ও দুলাল ভোটের মাঠ নিজেদের দখলে নিয়ে নেন।
কর্মী-সমর্থকেরা ব্যাপক প্রচারণা করেন। ট্রাক-নৌকা প্রতীককে কেন্দ্র করে তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। তবে বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ডা. দুলাল। পারিবারিক ঐতিহ্য ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি আখ্যায়িত করে দুলালের পরিচয় তুলে ধরে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত তার কর্মীরা। দলীয় মেরুকরণ থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাধারণ অনুসারীদের ভোট ট্রাক প্রতীকে পড়লে ভোটের হিসাবে এগিয়ে যেতে পারেন ডা. দুলাল।
এদিকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে নিতে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হাবিবুর রহমান হাবিব।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেঞ্চুগঞ্জের চন্ডী প্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে নৌকার সমর্থনে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেদিকে গিয়েছি সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে নানা গুজব ছড়িয়েছে। গুজবে আপনারা কান দেবেন না। নৌকার বিজয় ৭ জানুয়ারি সুনিশ্চিত। মানুষ নৌকায় ভরসা রেখেছেন। উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গত আড়াই বছরে সিলেট-৩ আসনের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি আবার এমপি নির্বাচিত হলে সিলেট-৩ আসনকে নানন্দিক ও স্মার্ট আসন হিসেবে গড়ে তুলব। আপনারা ভোটকেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে গিয়ে ভোট দিবেন।’
ডা. দুলাল উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছেন। বিজয়ী হলে এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করবেন বলে ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন। ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন,‘নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্রে না যেতে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন হাবিবের লোকেরা। জনগণ এখন পরিবর্তন চাই। এই এমপি সংসদে মানুষের দুঃখ না বুঝে বিদ্যুতের বিল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। আমেরিকা-ইউরোপের মতো বাংলাদেশ হয়ে গেছে দাবি করেছেন। তিনি আর কতুটুকু মানুষের দুঃখ বুঝবেন। হাবিবের লোকেরা ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছেন, নানা গুজব ছড়াচ্ছেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, তারা জেনে গেছে ট্রাক মার্কার বিজয় নিশ্চিত। জনগণ ভালো মানুষ, ভালো ব্যক্তি, দেশের কল্যাণে কাজ করা একজন মানুষকে সংসদে পাঠাতে চান। জনগণই আমার শক্তি। জনগণই ফয়সালা করবেন কে হবেন তাদের জনপ্রতিনিধি। আমি নির্বাচিত হলে আমার রাষ্ট্র বা আমার নির্বাচনী এলাকার কোনো ক্ষতি হোক এমন কোনো কাজ করব না। বর্তমান এমপি হাবিব এবারের নির্বাচনের ছয়-সাত মাস আগ থেকে উন্নয়নের নামে শুধু ফলক উন্মোচন করেছেন। কিন্তু জনগণ এখন দেখেন সেই ফলক দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে, উন্নয়নের ছিটেফোঁটা নেই। নেই কোনো টেন্ডার। জনগণের আবেগকে এবং দুর্ভোগকে নিয়ে খেলা করা এই ব্যক্তি হিসাব পাবেন ভোটের দিন।’
তিনটি উপজেলা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিকে) আটটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ওই আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৫১টি। এর মধ্যে সিসিকের ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে ১৬টি ভোটকেন্দ্র। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৩৬টি, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৬৩টি ও বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩৬টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে ৮৭৬টি।
সংবাদটি ভালো লাগলে স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন